বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় ভারতই ভরসা, ইউনূস ‘চরমপন্থীদের মুখোশ’! বার্তা হাসিনার

Hasina India Hybrid Regime Warning

নয়াদিল্লি: বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফের এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠালেন ভারত ও আন্তর্জাতিক মহলকে। একটি বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি সতর্ক করে বলেন, বাংলাদেশ যেন “পাকিস্তানের মতো হাইব্রিড শাসনব্যবস্থার ফাঁদে না পড়ে”, তা নিশ্চিত করতে ভারতের ভূমিকা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি অপরিহার্য।

Advertisements

অটল বন্ধু ভারত

তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ভারত শুধু বাংলাদেশের প্রতিবেশী নয়, বরং “অটল বন্ধু” ও “গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতার প্রধান অংশীদার”। হাসিনা বলেন, “আমরা শুধু চাই, ভারত যেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে সমর্থন করে-যাতে তারা নিজেদের সরকার নিজেরাই বেছে নিতে পারে। ভারতের ধারাবাহিক সম্পৃক্ততা ছাড়া বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভিত নড়বড়ে হয়ে যাবে।”

   

হাসিনার এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এল, যখন মহম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন নতুন প্রশাসনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। হাসিনা সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান নেতৃত্ব “অদক্ষ, অভিজ্ঞতাহীন এবং বিপজ্জনকভাবে চরমপন্থীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে”। তাঁর কথায়, “ইউনূসের ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের সমস্যা আমার কারণে নয়, বরং ওর নিজের নীতিগত ব্যর্থতার ফল। ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে পারেনি, বরং সরকার থেকেই ভারতবিরোধী মনোভাব উস্কে দেওয়া হচ্ছে। এটা এমন এক নেতৃত্বের উদাহরণ, যে বুঝতেই পারছে না, বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার জন্য ভারতের বন্ধুত্ব কতটা জরুরি।”

‘ভারত আমার পাশে থেকেছে’, কৃতজ্ঞতার সুরে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী Hasina India Hybrid Regime Warning

ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পরও ভারত তাঁর প্রতি যে কূটনৈতিক সহানুভূতি দেখিয়েছে, তার প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “ভারত আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু। আমি ভারতীয় জনগণের প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। তারা আমাকে আশ্রয় ও সম্মান দিয়েছেন। ভারত কখনও আমাকে বোঝা হিসেবে দেখেনি, বরং তারা জানে, বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা মানেই আঞ্চলিক শান্তি।”

হাসিনা মনে করেন, দিল্লির নীতিগত অগ্রাধিকার সবসময়ই “একটি বৈধ, স্থিতিশীল এবং জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার” প্রতিষ্ঠা করা। তিনি আরও জানান, আওয়ামী লীগ আজও বাংলাদেশের সমাজের গভীরে প্রোথিত, “এই দলকে নতুন করে গড়ে তোলার প্রয়োজন নেই, কারণ কোটি কোটি সাধারণ মানুষ আজও আওয়ামী লীগের পাশে রয়েছে।”

‘চরমপন্থীদের হাতে ক্ষমতা বিপজ্জনক’, ইউনূস সরকারের তীব্র সমালোচনা

সাক্ষাৎকারে হাসিনা সতর্ক করে বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন ক্রমেই এক বিপজ্জনক মোড়ের দিকে এগোচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, “মহম্মদ ইউনূস আসলে এক ছদ্মনেতা, যার সরকারের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রয়েছে হিযবুত তাহরীরের মতো জঙ্গিগোষ্ঠীর হাতে।”

তিনি ভারতের পাশাপাশি অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তিকেও আহ্বান জানান, যেন তারা বাংলাদেশের উপর আন্তর্জাতিক চাপ বজায় রাখে, এবং একটি “মুক্ত, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক” নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নেয়। হাসিনার মতে, “বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সুস্থ করতে হলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারকে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরতে দিতে হবে। সেটিই একমাত্র পথ।”

Advertisements

‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ইতিহাস ও বিশ্বাসের বন্ধনে বাঁধা’

হাসিনা পরিষ্কারভাবে জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক কেবল রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক নয়, এটি ইতিহাস, রক্ত ও বিশ্বাসের সম্পর্ক। তাঁর ভাষায়, “এই দুই দেশের বন্ধন হৃদয়ের বন্ধন। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে প্রতিটি সংকটে ভারত আমাদের পাশে থেকেছে। সেই সম্পর্কের ভিত্তি এত গভীর যে, কোনো সাময়িক রাজনৈতিক পরিবর্তন সেটিকে ভাঙতে পারবে না।”

তিনি আরও যোগ করেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় ভারতের ভূমিকা এখন শুধু বন্ধুত্বের প্রশ্ন নয়, এটি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার একটি নৈতিক দায়িত্ব।

“ভারত যদি দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায়, তবে বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার পাশে দাঁড়াতে হবে। ভারতই আমাদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য কণ্ঠ।”

‘গণতন্ত্রই ভবিষ্যতের একমাত্র পথ’, শেষ বার্তায় হাসিনা

সাক্ষাৎকারের শেষ পর্যায়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সুরক্ষার উপর। তাঁর মতে, “যে দিন বাংলাদেশের জনগণ মুক্তভাবে ভোট দিতে পারবে, সে দিনই এই দেশের রাজনৈতিক সুস্থতা ফিরবে। ভারত আমাদের পাশে থেকে সেই পথকে রক্ষা করুক, এটাই আমার একমাত্র আবেদন।”

হাসিনার এই সাক্ষাৎকার কার্যত নতুন এক কূটনৈতিক বার্তা, যেখানে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করছেন, তাঁর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ভূমিকা যতই অনিশ্চিত হোক না কেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের গভীরতা কোনওভাবেই ক্ষুণ্ণ হওয়া উচিত নয়।