বাংলাদেশের ‘ক্যাঙ্গারু কোর্টে’ দোষী সাব্যস্ত প্রধানমন্ত্রী হাসিনা

Hasina found guilty

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নজিরবিহীন দিনে৷ চলছে রায়ের শেষ অংশ পড়া। জুলাই ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার রায় ঘোষণা করবে আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)। দেশের রাজনৈতিক অক্ষ বরাবর এই রায়ের প্রভাব তুলনাহীন বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisements

দমন-পীড়নের মূল পরিকল্পনাকারী ও স্থপতি

শুনানির দীর্ঘ ধারাবাহিকতায় আদালত স্পষ্ট করেছেন, শেখ হাসিনা শুধুমাত্র সরকার প্রধান হিসেবে নয়, বরং সারা দমন-পীড়নের “মূল পরিকল্পনাকারী ও স্থপতি” হিসেবেও সরাসরি যুক্ত ছিলেন। প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে বলেন, আন্দোলন দমন একটি বিচ্ছিন্ন প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ছিল না; বরং শীর্ষ নেতৃত্বের পরিকল্পিত ও সুসংগঠিত নির্দেশনার ফলাফল।

   

২৮ কার্যদিবস জুড়ে চলা শুনানিতে মোট ৫৪ জন প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী সাক্ষী তাদের বিবরণ দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন, নির্বিচারে গ্রেফতার, রাতের অন্ধকারে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টির মতো ঘটনায় রাষ্ট্রীয় বাহিনী কতটা নিপীড়ন চালিয়েছে, তা আদালতে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এই বিক্ষোভ শেষে ৫ আগস্ট ২০২৪-এ পদচ্যুত হন হাসিনা, এবং সেই দিনই তিনি দেশ ছাড়ে। এরপর থেকে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। একই সঙ্গে, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও ভারতে অবস্থান করছেন বলে আদালতে উল্লেখ আছে, যা মামলার রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটকে আরও জটিল করে তুলেছে।

মেয়রের সঙ্গে হাসিনার ফোনালাপ Hasina found guilty

ট্রাইব্যুনালের রায়ের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর অংশ হল ১৮ জুলাই ঢাকার দক্ষিণ সিটির মেয়রের সঙ্গে হাসিনার ফোনালাপ। আদালতের ভাষ্য অনুযায়ী, ওই আলাপচারিতায় তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে ‘অস্ত্রধারী বিক্ষোভকারীদের গুলি করে হত্যা’ করার নির্দেশ দেন। এর পরই ড্রোন ও হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়, এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে কড়া অভিযান চালানো হয়। একই সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক গ্রেফতারের নির্দেশও দেয়া হয়।

Advertisements

রায়ে আরও বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক মিলিতভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছেন। পৃথক মামলার পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে ছাত্রদের ওপর ভয়ভীতি প্রদর্শন, পদ্ধতিগত নির্যাতন, এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিবর্ষণের ভিডিও প্রমাণ। প্রতিটি বিষয়ই প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে নেওয়া পরিকল্পিত সিদ্ধান্তের প্রমাণ বহন করে।

রায়ের প্রভাব

আজকের রায় শুধু এক মামলার নিষ্পত্তি নয়; এটি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের ব্যবহার এবং নাগরিক অধিকার রক্ষার সীমা নির্ধারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই রায় প্রভাব ফেলবে শুধু অভিযুক্তদের ভাগ্যেই নয়, দেশের রাজনৈতিক কাঠামো, আন্দোলনের ইতিহাস এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রেও।

নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, রায়ের সঙ্গে বাংলাদেশে রাজনৈতিক শক্তির ভারসাম্য এবং আন্দোলন ও সংরক্ষিত নাগরিক অধিকার নিয়ে চলমান বিতর্ক নতুন ধাপে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। দেশের নজর এখন আইসিটির বিচারকক্ষের দিকে—যেখানে কিছুক্ষণের মধ্যেই উচ্চারিত হবে রায়ের চূড়ান্ত শব্দ: ‘ন্যায়বিচার’।