ঢাকা: বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পতনের নেপথ্যে ছিল আমেরিকার মানবিক সংস্থা ইউএসএইড (USAID), প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের পরিবার এবং নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনূসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক! এই ত্রয়ীর যোগসাজশেই ২০২৪ সালের রাজনৈতিক উত্থান ঘটেছিল৷ এমনটাই দাবি করলেন হাসিনা সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী মোহিবুল হাসান চৌধুরী।
সুপরিকল্পিত ও দীর্ঘমেয়াদি অপারেশন
রুশ সংবাদমাধ্যম ‘রাশিয়া টুডে’ (RT)-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চৌধুরী বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট যে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের জেরে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়, সেটি আসলে “একটি সুপরিকল্পিত ও দীর্ঘমেয়াদি অপারেশন”— যার ছায়া ছিল পশ্চিমা শক্তি ও আন্তর্জাতিক এনজিও-রাজনীতির।
চৌধুরীর কথায়, “কিছু এনজিও, বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএইড ও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (IRI), ২০১৮ সাল থেকেই আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রচার চালাচ্ছিল। এই প্রচারই ধীরে ধীরে দেশে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক মাটি তৈরি করে, যার ফলশ্রুতিতে হাসিনার সরকারকে হটানো সম্ভব হয়।”
ক্লিনটন-ইউনূস যোগ Hasina Downfall Conspiracy
তিনি অভিযোগ করেন, এই গোটা প্রক্রিয়ায় ইউনূস ও ক্লিনটন পরিবারের দীর্ঘস্থায়ী ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্কই ছিল মূল চালিকা শক্তি। তিনি বলেন, “বিল ক্লিনটন বহুবার ইউনূসের প্রশংসা করেছেন, এবং ২০২৪ সালের ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ সম্মেলনে ইউনূসকে বিশেষ সম্মান জানানো হয়েছিল। সেই ঘনিষ্ঠতা শুধুই সৌজন্য নয়, বরং বাংলাদেশের শাসন পরিবর্তনের নেপথ্যে থাকা একটি কৌশলগত সম্পর্কের প্রতিফলন৷”
চৌধুরীর আরও অভিযোগ, “ক্লিনটন ফাউন্ডেশন ও ইউনূসের এই সম্পর্ককে ব্যবহার করেই পশ্চিমা দাতাগোষ্ঠী বাংলাদেশে তথাকথিত গণতন্ত্র ও উন্নয়নের নামে ‘রেজিম চেঞ্জ’-এর মঞ্চ প্রস্তুত করে।”
তবে এই অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে ওয়াশিংটন। মার্কিন প্রশাসনের বক্তব্য, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের কোনও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা নেই, এমন দাবি করা হাস্যকর।”
প্যারিস থেকে ঢাকায় ফেরেন ইউনূস
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের জেরে পতন হলে, তিনি ভারতে আশ্রয় নেন। সেই সময় মহম্মদ ইউনূস প্যারিস থেকে ঢাকায় ফিরে এসে ছাত্র আন্দোলনের প্রস্তাবে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এরপর আওয়ামী লীগকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়, এবং বলা হয়— দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তারা কোনও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন না।
এরপর থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতি অস্থির ও দ্বিধাবিভক্ত। আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে একদিকে ক্ষমতার শূন্যতা, অন্যদিকে খালেদা জিয়ার বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামির মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিভাজন, পুরো রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।
হাসিনা পতনের এক বছরেরও বেশি সময় কেটে গেলেও, আজও জিইয়ে আছে প্রশ্নটি, এটি কি সত্যিই এক ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণআন্দোলনের ফল, নাকি আন্তর্জাতিক শক্তির কৌশলগত হস্তক্ষেপের নিখুঁত রূপায়ণ?
