টানা ১৭ বছর জেলে থাকার পর মুক্ত বাংলাদেশের (Bangladesh) প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। তিনি বিএনপি দলের নেতা ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ। বাংলাদেশে বিএনপি-জামাত ইসলামি জোট সরকারের আমলে ভারত বিরোধী বিশাল আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান ধরা পড়েছিল। সেই চাঞ্চল্যকর ‘দশ ট্রাক অস্ত্র’ মামলায় জড়িত ভারতীয় জঙ্গি নেতা ও অসমের জঙ্গি সংগঠন আলফা (স্বাধীনতা) গোষ্ঠীর প্রধান পরেশ বড়ুয়ার ঘনিষ্ঠ বলে বিতর্কিত তৎকালীন বাংলাদেশের মন্ত্রী বাবর।
লুৎফুজ্জামান বাবর মুক্ত Former Bangladesh minister Babar released from jail
এই মামলায় বাংলাদেশে ফাঁসির আসামী ছিল ভারতীয় জঙ্গি সংগঠন আলফা(স্বাধীনতা) গোষ্ঠীর প্রধান পরেশ বড়ুয়া। তার মৃত্যুদণ্ডের সাজা আগেই কমানো হয়েছে। আর লুৎফুজ্জামান বাবর মুক্তি পেলেন। বাংলাদেশে গত বছর রক্তাক্ত গণবিক্ষোভে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। তার শাসন আমলে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় ফাঁসির আসামী হিসেবে জেলে ছিলেন বাবর।
বিবিসি জানিয়েছে, “২০০৭ সালের ২৮শে মে গ্রেফতার হন লুৎফুজ্জামান বাবর। এরপর বিভিন্ন মামলায় তার দণ্ড হয়। এর মধ্যে দুটি মামলায় তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং একটিতে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তবে আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর এসব মামলার আপিল শুনানি শেষে একে একে খালাস পান তিনি। সবশেষ আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় যাবজ্জীবন সাজা থেকে খালাস পান তিনি।”
২০০৪ সালে বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার সরকার চলছিল। সেই সময় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দশটি ট্রাক বোঝাই আগ্নেয়াস্ত্র গোপনে ভারতে পাচার হওয়ার আগেই ধরা পড়ে। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে পরেশ বড়ুয়া মায়ানমারে চলে যায়। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের অসমে একাধিক নাশকতা ও গণহত্যা চালানোয় অভিযুক্ত পরেশ বড়ুয়া বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ জঙ্গি নেতা।
ভারতে নাশকতার চেষ্টা চাঞ্চল্যকর ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা
বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার সরকারের অভ্যন্তরে সুকৌশলে সংযোগ স্থাপন করেছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আলফা। পরিকল্পনা মাফিক চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বিপুল পরিমান আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালানের সবুজ সংকেত আসে। ২০০৪ সালের ১লা এপ্রিল চালান হস্তান্তর হওয়ার আগেই পর্দা ফাঁস হয়। বন্দরের নিরাপত্তারক্ষীরা আটক করেন বহু পেটি। আগ্নেয়াস্ত্র বোঝাই সেই পেটিগুলি নিয়ে যেতে দশটি ট্রাক লেগেছিল। এই কারনে নাম দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা।
বিপুল পরিমাণ সেই চোরাই আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুতফুজ্জামান বাবর। তবে কাউকেই ধরা যায়নি। প্রশ্ন উঠতে থাকে সরকারের ভূমিকা নিয়েই।বিএনপি সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ আমলে এই মামলার তিন প্রধান আসামী পরেশ বড়ুয়া ওরফে কামারুজ্জামান, লুৎফুজ্জামান বাবর ও জামাত ইসলামির শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির আদেশ হয়। নিজামীর দেশদ্রোহের অন্য মামলায় ফাঁসি হয়।
আরও পড়ুুন: Paresh Baruah: দুনিয়ায় আছে তিনটি চিন! কোন চিনে লুকিয়ে জঙ্গি পরেশ বড়ুয়া?
ছদ্মবেশে পরেশ বড়ুয়া অস্ত্র ঢুকেছিল বাংলাদেশে
এই মামলায় বাংলাদেশের ৫ প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তা ফাঁসির আসামী। তদন্তে উঠে আসে সরকারের অভ্যন্তর থেকে সেনাবাহিনীর ভিতরে চক্রান্তের জাল ছড়িয়েছিল আলফা। পলাতক পরেশ বড়ুয়া ওরফে কামারুজ্জামান ওরফে নুরুজ্জামানও। জানা গেছিল আলফা জঙ্গি প্রধান পরেশ বড়ুয়া অসমসহ ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যে হামলার জন্য বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। তবে সেই চালান ধরা পড়ে যায়।