ঢাকা: রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (Shahjalal Airport) কার্গো ভিলেজে শনিবার দুপুরে ভয়াবহ আগুন। দুপুর ২টা ১৫ মিনিটের দিকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানা গেছে। দ্রুতই আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়, পরে আগুনের তীব্রতা বাড়ায় আরও সাতটি ইউনিট যোগ হয়। বর্তমানে মোট ১৪টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডিউটি অফিসার লিমা খানম জানান, “দুপুর ২টা ৩৪ মিনিটে আমরা আগুন লাগার খবর পাই। সঙ্গে সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের সাতটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। পরে পরিস্থিতি বিবেচনা করে আরও ইউনিট যোগ করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এখন পর্যন্ত আগুনের উৎস বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।”
কার্গো ভিলেজে মূলত বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্য—যেমন ইলেকট্রনিক সামগ্রী, পোশাক, খাদ্যদ্রব্য ও অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্য—সংরক্ষিত থাকে। আগুন লাগার কারণে বিপুল পরিমাণ পণ্য পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অগ্নিকাণ্ডের পর বিমানবন্দর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা সতর্ক অবস্থানে আছেন।
বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা জানান, “আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে কর্মীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। ধোঁয়ার কারণে প্রথম দিকে এলাকা অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযান শুরু করে।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে উত্তর দিক থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আগুনের তীব্রতা বেড়ে যায় এবং গোটা এলাকা কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা একাধিক পানির পাইপ ও ফোম ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, “আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগবে। কারণ এখানে দাহ্য পদার্থ ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম রয়েছে, যা আগুন ছড়িয়ে পড়ায় ভূমিকা রাখছে।” ঘটনাস্থলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (CAAB) উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও পৌঁছেছেন। তাঁরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যাচাই এবং আগুনের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর পুলিশের (DMP) সদস্যরাও ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান এবং আশপাশের সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে আনেন যাতে উদ্ধারকাজে বিঘ্ন না ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও সঠিক কারণ জানা যাবে।
সন্ধ্যার আগেই আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা জানান, “আগুনের মূল অংশের কাছে পৌঁছানোই এখন চ্যালেঞ্জ। ঘন ধোঁয়া ও তীব্র তাপের কারণে আমরা পালাক্রমে কাজ করছি।”