ঢাকা: ঢাকার ধানমণ্ডি ৩২—বাংলাদেশের জাতিস্মৃতি, রাষ্ট্রগঠনের ইতিহাস ও রাজনৈতিক ট্র্যাজেডির এক গভীর প্রতীক। সোমবার সেই স্থানকে ঘিরেই ফের উত্তেজনার সুর। ঢাকা কলেজের কয়েকশো শিক্ষার্থী বুলডোজারের কনভয় নিয়ে হঠাৎই ধানমণ্ডি ৩২-এর উদ্দেশে রওনা দিলে পুরো রাজধানী মুহূর্তে থমকে যায়।
এনটিভি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা দাবি করেন শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার পৈতৃক বাড়ির জমি শিশুদের খেলার মাঠ হিসেবে ‘পুনর্বিন্যাস’ করার দাবিতেই তারা মিছিল করছেন। কিন্তু এই যুক্তি রাজপথে আলোড়ন তুললেও, তার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইঙ্গিতকে বিশেষজ্ঞরা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন।
নিরাপত্তা বাহিনীর বুলডোজারের কনভয়ে বাধা
জামুনা টিভির খবর, ধানমণ্ডি এলাকায় প্রবেশের আগেই নিরাপত্তা বাহিনী বুলডোজারের কনভয় থামিয়ে দেয়। ফলে উত্তেজনা আরও বাড়লেও পরিস্থিতি আপাত শান্ত রয়েছে। তবে নিরাপত্তা সূত্রের মতে, ছড়িয়ে পড়া গুজব ও উত্তেজনার বিস্তার রোধেই এই দ্রুত পদক্ষেপ।
এই ঘটনার পটভূমি অত্যন্ত জটিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমণ্ডি ৩২-এই আততায়ীর গুলিতে নিহত হন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্য। সেই থেকেই ভবনটি জাতীয় শোক, স্মৃতি ও রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়।
স্মৃতিসৌধ নষ্ট Dhanmondi 32 Bulldozer Protest
কিন্তু শেখ হাসিনার পতনের পর ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই বাড়ি আবার বিধ্বস্ত হয়—একদল বিক্ষোভকারীর হামলায় ভবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভেঙে পড়ে, স্মৃতিসৌধ নষ্ট হয়, এবং পরে পুরো ভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তদন্তকারীরা বলছেন—এই বিক্ষোভে উগ্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর অনুপ্রবেশ ছিল। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভূমিকম্পে এই ঘটনা এক প্রতীকী বিস্ফোরণের মতোই ধরা পড়ে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে।
সেই ক্ষত এখনও শুকোয়নি। ঠিক এমন সময় আবার বুলডোজার নিয়ে ধানমণ্ডি ৩২-এর দিকে অগ্রসর হওয়া নতুন করে এক দুঃসাহসিক সংকেত—যা শুধু আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন নয়, বরং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় স্মৃতি ও রাজনৈতিক পরিচয়ের ওপর চাপ সৃষ্টির ইঙ্গিত বহন করছে।
এ কারণেই বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন:
ধানমণ্ডি ৩২-কে কেন্দ্র করে প্রতিটি আন্দোলনই এখন বাংলাদেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক সংঘাতের প্রতীকী যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য কতটা স্বতঃস্ফূর্ত, কতটা সংগঠিত, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন ঘনিয়ে উঠছে। ভবনটির পুনর্নির্মাণ, সংরক্ষণ, এবং ‘জাতিস্মৃতি’ হিসেবে তার মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা-এসব নিয়েই এখন ঢাকার রাজনৈতিক আলাপ আরও তীব্র হওয়ার সংকেত মিলছে।
ধানমণ্ডি ৩২-এর সামনে যে অস্থিরতার স্রোত আরও ঘনীভূত হচ্ছে, সোমবারের ঘটনাই যেন তার নতুন অধ্যায়।
Bangladesh: Dhaka College students sparked alarm by attempting to march a bulldozer convoy towards Dhanmondi 32, Sheikh Mujibur Rahman’s symbolic home, claiming they want to repurpose the land as a playground. The move, seen as highly provocative after the February attack, was quickly halted by security forces amid rising political tension.


