বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নতুন মাত্রায় পৌঁছাল। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর তাঁকে দেশে ফিরিয়ে এনে গ্রেফতারের লক্ষ্যে এবার ইন্টারপোলের সাহায্য নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে ঢাকা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের উদ্ধৃতি সংযুক্ত করেই হাসিনার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করতে ইন্টারপোলে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ পাঠাবে পুলিশ। ইতিমধ্যেই হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য ভারতকে সরকারি চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ।
দিল্লির প্রতিক্রিয়া—‘বিচারিক প্রক্রিয়া চলছে’
ভারত বুধবার জানিয়েছে, ঢাকা থেকে পাঠানো অনুরোধ তাদের কাছে পৌঁছেছে এবং এটি বর্তমানে বিচারিক ও অভ্যন্তরীণ আইনি কাঠামোর মধ্যেই পরীক্ষা করা হচ্ছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন,
“হ্যাঁ, আমরা অনুরোধটি পেয়েছি। আইন অনুযায়ী এটি পর্যালোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশের শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতি অটুট। আমরা গঠনমূলক যোগাযোগ বজায় রাখব।”
২০২৪ সালের জুলাই মাসে বিক্ষোভ-হিংসার প্রেক্ষিতে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী—প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (মৃত্যুদণ্ড) এবং পুলিশের প্রাক্তন আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (পাঁচ বছরের কারাদণ্ড)।
ঢাকায় আওয়ামী লিগের কঠোর অবস্থান—তিন দিনের দেশব্যাপী বিক্ষোভ
এই রায়কে ‘অবৈধ, বানোয়াট ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হাতিয়ার’ বলে দাবি করে আজ থেকেই সারা দেশে বিশাল কর্মসূচি শুরু করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লিগ। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশজুড়ে ঘেরাও ও বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে দলটি। আওয়ামী লিগ নেতৃত্বের অভিযোগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস “অবৈধ দখলদার” এবং “ফ্যাসিবাদী শাসক”, যিনি ষড়যন্ত্র করে হাসিনা ও আওয়ামী লিগকে আসন্ন নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চাইছেন।
সামনের দিনগুলো আরও অশান্ত?
ইন্টারপোলের পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত ঢাকা–দিল্লি–আন্তর্জাতিক কূটনীতির ত্রিভুজে নতুন প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। ভারত কীভাবে প্রত্যর্পণ-অনুরোধ বিবেচনা করবে, তা শুধু দুই দেশের সম্পর্ক নয়, দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। একইসঙ্গে আওয়ামী লিগের রাস্তায় নামা বিক্ষোভ দেশের রাজনীতিকে আরও অস্থির করে তুলতে পারে—এমন সতর্কবার্তাও দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশের উত্তপ্ত রাজনীতির এই মুহূর্তে প্রত্যর্পণ-তৎপরতা, আন্দোলনের তীব্রতা এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া—তিনটি ধারাই নির্ধারণ করে দেবে পরবর্তী পর্বের গতিপথ।
