ঢাকা: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় এক ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় শিশুদের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা দেশে। সোমবার দুপুরে ঢাকার উত্তরা এলাকায় একটি স্কুলের উপর বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ার ঘটনায় মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ (Death toll rises to 27 in bangladesh)। তার মধ্যে ২৫ জনই শিশু।
২০ জনের দেহ পরিবারকে তুলে দেওয়া হয়েছে
ঘটনায় মৃতদের বাকি দু’জন হলেন বিমানটির পাইলট ও স্কুলের এক শিক্ষিকা। মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশের জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এক সাংবাদিক বৈঠকে এই তথ্য জানান ইনস্টিটিউটের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসের সহকারী চিকিৎসক মহম্মদ সায়েদুর রহমান।
চিকিৎসক জানান, এখনও পর্যন্ত ২০ জনের দেহ পরিবারকে তুলে দেওয়া হয়েছে। আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও অন্তত ৭৮ জন। সব মিলিয়ে দুর্ঘটনায় জখমের সংখ্যা অন্তত ১৭০। অধিকাংশই আগুনে দগ্ধ। তিনি আরও জানান, রক্তদাতার সংখ্যা পর্যাপ্ত হলেও কিছু নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপের রক্তের প্রয়োজন হতে পারে। দগ্ধ শিশুদের দ্রুত আরোগ্যের জন্য দেশবাসীর কাছে প্রার্থনার আবেদনও জানান তিনি।
কীভাবে ঘটল দুর্ঘটনা?
সোমবার দুপুরে কুর্মিটোলার বিমানঘাঁটি থেকে ওড়ে বায়ুসেনার একটি প্রশিক্ষণ বিমান—FT-7 BGI। এই মডেলটি চিনের চেংদু এয়ারক্রাফট কর্পোরেশনের তৈরি, যা সাধারণত প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। উড়ার মাত্র ১২ মিনিটের মধ্যেই বিমানটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয় বলে জানায় সামরিক বাহিনীর জনসংযোগ দফতর (ISPR)। পাইলট তখন বিমানটিকে ফাঁকা জায়গায় নামাতে চাইলেও তা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত সেটি ভেঙে পড়ে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ-এর এক ভবনের উপর।
ওই ভবনে ছিল ১৬টি ক্লাসরুম ও ৪টি শিক্ষক কক্ষ। তখন ক্লাস চলছিল, কিছুক্ষণ পরেই ছুটির ঘণ্টা বাজার কথা ছিল। তার আগেই ঘটে বিপর্যয়। বিমানটি ভেঙে পড়তেই তাতে আগুন লেগে যায়, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে স্কুল ভবনের মধ্যে। অনেকে ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে যান, অনেক শিশু আগুনে দগ্ধ হয়।
হাসপাতালে মৃত্যু, শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষা
দুর্ঘটনার খবর ছড়াতেই স্কুলের সামনে ভিড় জমে যায় অভিভাবকদের। বহু অভিভাবক জানান, তাঁরা সন্তানদের খুঁজে পাচ্ছেন না। আহতদের একের পর এক অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই মৃত্যু হয় অনেকের। এমনও বহু শিশু রয়েছে, যাদের দেহ এতটাই পুড়ে গিয়েছে যে শনাক্ত করা কঠিন। এদের চিহ্নিত করতে ডিএনএ পরীক্ষার সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
বাংলাদেশে এর আগে কখনও কোনও স্কুল ভবনে সামরিক বিমান ভেঙে পড়ে এমন ভয়াবহ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। ইতিমধ্যেই ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশের বায়ুসেনা ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন এবং আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সুনিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন।