বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে বার্তা সেলিমের

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সংখ্যালঘুদের (Bangladesh minority) উপর অত্যাচার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম (Md Salim)। শনিবার জলপাইগুড়িতে সিপিএমের জেলা…

CPM Leader Mohammed Salim Raises Concern Over Minority Rights

short-samachar

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সংখ্যালঘুদের (Bangladesh minority) উপর অত্যাচার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম (Md Salim)। শনিবার জলপাইগুড়িতে সিপিএমের জেলা সম্মেলনের উপলক্ষে আয়োজিত একটি প্রকাশ্য জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন।

   

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট নিয়ে উদ্বেগ
সেলিম বলেন, “বাংলাদেশে বর্তমানে কোনও নির্বাচিত সরকার নেই। গণতান্ত্রিক কাঠামো পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। কোথা থেকে কে সুতো টানল, বলা হলো শেখ হাসিনা নয়, নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনিস হবেন নেতৃত্বে। এটি অত্যন্ত চিন্তার বিষয়। গণতন্ত্রহীন একটি দেশে নৈরাজ্য তৈরি হয় এবং সেই পরিস্থিতির সুযোগ নেয় মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলি।”

সেলিমের মতে, গনতন্ত্রের অভাব একটি দেশের মধ্যে বিভাজন এবং অস্থিরতা বাড়ায়। তিনি বলেন, “আমরা চাই বাংলাদেশের গণতন্ত্র ফিরে আসুক এবং সেখানকার জনগণের অধিকার সুরক্ষিত হোক। বাংলাদেশের নির্বাচন একটি নিরপেক্ষ পদ্ধতিতে সম্পন্ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।”

সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের প্রসঙ্গ
সেলিম বিশেষভাবে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে চলা অত্যাচারের ঘটনাগুলির প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ বন্ধ হওয়া উচিত। তাদের অধিকার সুরক্ষিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। গণতান্ত্রিক কাঠামোর অভাবের কারণে মৌলবাদী শক্তিগুলি মাথাচাড়া দিচ্ছে এবং এতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”

Kolkata private hospital denies treatment patients from Bangladesh’

ভারতের অবস্থান নিয়ে মন্তব্য
সেলিম বলেন, “পাশের দেশে যদি গণতন্ত্রহীনতা থাকে, তাহলে তার প্রভাব ভারতেও পড়বে। আমাদের দুই দেশের মধ্যে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তাই ভারতের দায়িত্ব রয়েছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে সমর্থন করা এবং মৌলবাদী শক্তিগুলির বিরুদ্ধে কূটনৈতিকভাবে সরব হওয়া।”
পাশাপাশি, তিনি বলেন, “ইউনূস সরকারকে এ বিষয়ে সক্রিয় হতে হবে। এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি আন্তর্জাতিক স্তরেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।”

গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি
সেলিমের মতে, গণতন্ত্রহীন অবস্থায় একটি দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “গণতন্ত্রের অভাবের কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিও অবনতির দিকে যাচ্ছে। মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। আমরা চাই, নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে গণতন্ত্র ফিরে আসুক এবং জনগণ তাদের অধিকার ফিরে পাক।”

জনসভায় উপস্থিতি ও প্রতিক্রিয়া
এদিন জলপাইগুড়ির জনসভায় সেলিমের বক্তব্য শুনতে বহু মানুষ উপস্থিত ছিলেন। তাঁর মন্তব্যে যেমন অনেকে সমর্থন জানিয়েছেন, তেমনই অনেকে বিষয়টি নিয়ে বিতর্কও তুলেছেন। তবে সেলিম স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, “এটি কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য নয়। এটি মানবিকতার প্রশ্ন। আমাদের প্রতিবেশী দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত থাকা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া আমাদের কর্তব্য।”

সাংবাদিক সম্মেলনে সেলিমের বক্তব্য
সভা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সেলিম আরও বিস্তারিতভাবে তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার বন্ধ না হলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে চাপ তৈরি করতে হবে। এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের জনগণের নয়, সমগ্র উপমহাদেশের শান্তি ও অগ্রগতির প্রশ্ন।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই, বাংলাদেশ সরকার তাদের প্রথম দায়িত্ব হিসেবে গণতান্ত্রিক কাঠামো পুনরুদ্ধার করুক এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর যে সমস্ত অত্যাচার চলছে তা অবিলম্বে বন্ধ করুক। এ ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সরকারকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সক্রিয় হতে হবে।”

মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য বর্তমান পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অভাব এবং সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের বিষয়টি আন্তর্জাতিক স্তরে আলোচিত হওয়া উচিত বলে মত প্রকাশ করেছেন তিনি। সেলিমের মতে, গণতন্ত্রহীনতা কেবলমাত্র একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়, এটি আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি। তাঁর এই বক্তব্য বাংলাদেশের গনতন্ত্র এবং সংখ্যালঘুদের অধিকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।