সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, ১৪টি হিন্দু বাড়ি গুঁড়িয়ে দিল মৌলবাদীরা

বাংলাদেশ: আবারও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় মাথাচাড়া দিল মৌলবাদ। যার বলি হলেন সাধারণ মানুষ, বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা (Communal Tensions in Rangpur)। গত…

সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, ১৪টি হিন্দু বাড়ি গুঁড়িয়ে দিল মৌলবাদীরা

বাংলাদেশ: আবারও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় মাথাচাড়া দিল মৌলবাদ। যার বলি হলেন সাধারণ মানুষ, বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা (Communal Tensions in Rangpur)। গত দু’দিন ধরে এলাকাটি কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। শনিবার রাতে শুরু হওয়া উত্তেজনা রবিবার পর্যন্ত চলতে থাকে। এই সময়কালে পরপর অন্তত ১৪টি হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুঠপাটের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রের খবর অনুযায়ী, গঙ্গাচড়ার একটি গ্রামের এক কিশোরের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়। অভিযোগ, ওই পোস্টটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে বলে দাবি তুলে এলাকায় ঢুকে পড়ে মৌলবাদীরা। বেছে বেছে হিন্দুদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। নারী ও শিশুদের প্রাণে মারেনি ঠিকই, কিন্তু ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা।

   

সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ থেকে এই হামলা— এমনটাই দাবি এলাকাবাসীর। মৌলবাদীদের উদ্দেশ্য ছিল ভয় দেখিয়ে হিন্দু পরিবারগুলোকে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করা। আর তাতেই বাস্তবে দেখা যায়, আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেন বহু হিন্দু বাসিন্দা। গ্রামগুলো কার্যত জনমানবশূন্য হয়ে পড়েছে। অভিযোগ, বাড়ি ভেঙে ফেলার পাশাপাশি লুঠপাটও চালানো হয়েছে।

এই ঘটনার পর রংপুর পুলিশ প্রশাসন প্রথমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেগ পায়। স্থানীয় প্রশাসনের চেষ্টাতেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত রবিবার বিকেল ৪টে নাগাদ সেনাবাহিনী পৌঁছায় এলাকায়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, সেনা মোতায়েনে এত দেরি কেন হল?

Advertisements

অন্যদিকে, যে কিশোরের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টকে কেন্দ্র করে এত কিছু ঘটল, তাকে ইতিমধ্যেই আটক করেছে পুলিশ। রবিবার দুপুরে আদালতের নির্দেশে তাকে সম্মিলিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো-র একটি প্রতিবেদন অনুসারে, প্রশাসন ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই মৌলবাদীদের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যায়। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ যে এখনও অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশে গুরুতর সমস্যা— এই ঘটনা ফের সেই আশঙ্কাকেই প্রমাণ করল।

এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন মানবাধিকার সংগঠনগুলি। তারা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সুরক্ষা ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সেই আহ্বান জানিয়েছে দেশের নানা স্তরের মানুষ। পাশাপাশি এই ঘটনায় অভিযুক্ত মৌলবাদীদের কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছে সাধারণ মানুষ ও সামাজিক সংগঠনগুলি।