কুমিল্লা: বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের সংবেদনশীল এলাকায় চোরাচালানের ছায়া আরও ঘন হয়ে উঠেছে। কুমিল্লা জেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে দুটি পৃথক অভিযান চালিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-র কুমিল্লা ব্যাটালিয়ন (১০ বিজিবি) প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ ৫১ হাজার টাকা মূল্যের ভারতীয় পোশাক সামগ্রী এবং মোবাইল ডিসপ্লে বাজেয়াপ্ত করেছে।
বিজিবির দাবি এই অভিযানগুলো শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতির মাত্রা নির্ধারণ করেনি, বরং স্থানীয় অর্থনীতি এবং সীমান্ত নিরাপত্তার উপর চোরাচালানের কুফলকেও আলোকিত করেছে। বিজিবির প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর আলী এজাজ বলেছেন, “আমরা সীমান্ত রক্ষায় অবিরাম সজাগ এবং এই বাজেয়াপ্তকরণ আমাদের তৎপরতার ফল।”
অর্থনীতিতে স্বস্তি, অক্টোবরে CPI কমার জোরাল সম্ভাবনা, জানাল সমীক্ষা
ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার এবং শনিবারের মধ্যে, যখন সীমান্তের গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বিজিবির টহলদল দুই দিক থেকে অভিযান চালায়। প্রথম অভিযানে আদর্শ সদর উপজেলার বিবিরবাজার এলাকায় কামারখাঁ জোড়া ব্রিজের কাছে একটি মিনি কাভার্ড ভ্যান থেকে ৯০১টি উন্নতমানের ভারতীয় শাড়ি এবং ১,৪৯৭টি মোবাইল ডিসপ্লে উদ্ধার করা হয়।
এসব পণ্যের বাজারমূল্য আনুমানিক ৭৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা। ভ্যানটি মালিকবিহীন অবস্থায় পড়ে ছিল, যা স্পষ্ট করে দেয় যে চোরাচালানকারীরা সীমান্ত অতিক্রম করে ভেতরে পাচারের পর্যায়ে ছিল। দ্বিতীয় অভিযানে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল এবং বুড়িচং এলাকায় আরও ৪০ লাখ টাকার শাড়ি, খাদ্যসামগ্রী এবং আতশবাজি জব্দ হয়, যা মোট মূল্যকে ১ কোটি ১৫ লাখ ৫১ হাজার টাকায় নিয়ে যায়। এই পণ্যগুলো মূলত ত্রিপুরা থেকে সীমান্ত পেরিয়ে আসছিল, যা স্থানীয় বাজারে কম দামে বিক্রির হত বলে জানা যাচ্ছে।
কুমিল্লার সীমান্ত অঞ্চলগুলো ব্রাহ্মণপাড়া, আদর্শ সদর, বুড়িচং দীর্ঘদিন ধরে চোরাচালানের হটস্পট। এখানে নদীবিধৌত সীমান্ত এবং জঙ্গলাঞ্চলের সুযোগ নিয়ে চোরাচালানকারীরা নিয়মিত অবৈধ পণ্য পাচার করে। সম্প্রতি অক্টোবর মাসেই এই এলাকায় তিন কোটি টাকার শাড়ি এবং পৌনে দুই কোটি টাকার মোবাইল ডিসপ্লে জব্দ হয়েছে, যা চোরাচালানের পরিসরকে প্রকাশ করে।
বিজিবি সূত্র জানায়, এই পণ্যগুলো স্থানীয় বাজারে প্রবেশ করে বৈধ ব্যবসায়ীদের ক্ষতি করে এবং রাষ্ট্রের রাজস্ব হরণ করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি উন্নত শাড়ির দাম বাংলাদেশে ৫-১০ হাজার টাকা, কিন্তু চোরাচালানের মাধ্যমে এটি অর্ধেক দামে বিক্রি হয়, যা স্থানীয় শিল্পক্ষেত্রকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়।
মোবাইল ডিসপ্লের বাজারও একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, যেখানে প্রতি টুকরোর দাম ২-৩ হাজার টাকা। এই অভিযানগুলোর ফলে কয়েকজন স্থানীয় চোরাচালানকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরও বড় নেটওয়ার্কের সূত্র পাওয়া গেছে।