সম্প্রতি বাংলাদেশের কিছু মৌলবাদী নেতার কলকাতা দখলের হুমকিতে উত্তেজনা (Mamata Banerjee-Ruhul kabir Rizvi) তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে। তারা দাবি করেছে যে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই কলকাতা, আগরতলা এবং ‘সেভেন সিস্টার্স’ (উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য) তারা দখল করে নিতে পারবে। এই ধরনের উস্কানিমূলক মন্তব্যে অনেকেই হাসাহাসি করেছেন এবং গুরুত্ব দিতে নারাজ।
কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee-Ruhul kabir Rizvi)একে হালকাভাবে নিতে নারাজ এবং তিনি সরাসরি এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “ভেবেও দেখবেন না যে আমরা বসে ললিপপ খাব।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ধরনের মন্তব্যের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে গিয়ে বলেছেন, “যারা বলছেন কলকাতা দখল করবেন, তাঁরা ভাববেন না, আমরা বসে ললিপপ খাব। আপনারা সেই ক্ষমতা রাখেন না। আমরা যথেষ্ট সক্রিয়, কিন্তু ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিই।” এই মন্তব্যটি সরাসরি বাংলাদেশ থেকে আসা হুমকির বিরুদ্ধে ছিল এবং মমতা নিজের দলের ও রাজ্যের শক্তি প্রদর্শন করতে চেয়েছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির নেতা রুহুল কবীর রিজভি পাল্টা আক্রমণ করে বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী গোঁসা হয়ে গেছেন, কষ্ট পেয়েছেন। তিনি বলেছেন বাংলাদেশ থেকে ওড়িশা, বিহার দখল করতে আসবে, তাহলে কি আমরা ললিপপ খাব? আমিও বলতে চাই, যদি আপনারা চট্টগ্রামের দিকে তাকান এবং দাবি করেন, তাহলে কি আমরা আমলকি চুষব? তা তো আমরা চুষব না।” রিজভির এই উক্তি একদিকে যেমন পাল্টা আক্রমণ, তেমনি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ওপর চাপ সৃষ্টি করার আশঙ্কাও তৈরি করে।
বাংলাদেশের কিছু মৌলবাদী দলের নেতারা যে ভারতের ভূখণ্ড দখলের কথা বলছেন, তার ফলে দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। যদিও এই ধরনের বক্তব্য অনেকেই অবাস্তব এবং রাজনৈতিক শোরগোল সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে বলেন, তবুও এই ধরনের উস্কানি উত্তেজনা বাড়াতে পারে এবং ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি করতে পারে।
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের অবস্থান শক্তিশালী হলেও, তিনি এই পরিস্থিতি আরও শত্রুতাপূর্ণ করতে চান না। মমতার মতে, এই ধরনের উস্কানিমূলক মন্তব্য শুধুমাত্র দুই দেশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করতে পারে এবং রাজনীতির নামে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা উচিত নয়। তিনি বরাবরই শান্তি এবং সহযোগিতার পক্ষের, এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চান। তবে, তাঁর সরকার শক্তিশালী, এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কোনো ধরনের আপস হবে না, এই বিষয়টি তিনি বারবার স্পষ্ট করেছেন।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিবেশে, যেখানে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে চরম সংঘাত রয়েছে, এমন বক্তব্য আরও রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একদিকে যেমন বিজেপির বিরুদ্ধে সরব, তেমনি দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। তাঁর বক্তব্যে এক ধরনের আত্মবিশ্বাসও ফুটে উঠেছে, যা দেখায় যে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার কোনো হুমকির সামনে নত হয়ে যাবে না।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাবে। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সহযোগিতা ও সম্পর্কের ভিত্তি একে অপরের প্রতি সম্মান এবং সহযোগিতার মাধ্যমে শক্তিশালী হয়েছে। তাই, রাজনৈতিক বিবাদ বা উস্কানিমূলক বক্তব্যে যে সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হতে পারে, তা দুই পক্ষেরই উচিৎ যেন তারা বুঝতে পারে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিএনপি নেতা রুহুল কবীর রিজভির মধ্যে পাল্টাপাল্টি আক্রমণ শুধুমাত্র রাজনৈতিক শত্রুতার প্রতিফলন নয়, বরং দুই দেশের সম্পর্কের ওপরও এর প্রভাব পড়তে পারে। যে কোনো রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেই দুই দেশের মানুষের মধ্যে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার পরিবেশ বজায় রাখাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।