‘এত রক্ত কেন’- রবীন্দ্রনাথের ‘রাজর্ষি’ উপন্যাসের এই অমোঘ প্রশ্নটি বাংলাদেশে (Bangladesh) এখন ভীষণ প্রকট। সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়মের সংস্কার ও মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দাবিতে বিক্ষোভে সামিল লক্ষ লক্ষ পড়ু়য়ার বিক্ষোভ থামাতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে গেল শেখ হাসিনার সরকার। অগ্নিগর্ভ পদ্মাপার। গোটা বিশ্ব জুড়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ক্ষোভ তুঙ্গে। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে একমেদ্বিতীয়ম হয়ে ক্ষমতা ধরে রাখলেও এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের সরকার পড়ুয়াদের কাছে প্রবল ধিকৃত।
বিক্ষোভরতদের মৃতদেহের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। ঢাকার সংবাদ মাধ্যম ‘ইত্তেফাক’ জানাচ্ছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ সংঘর্ষে ১১ শিক্ষার্থীসহ অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন।
বিবিসি বাংলা জানাচ্ছে, নিহতদের তালিকায় আছেন ‘ঢাকা টাইমস২৪’ সংবাদ মাধ্যমের এক সাংবাদিক। নিহতের নাম মেহেদী হাসান। তিনি ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় সংবাদ সংগ্রহ করার সময় গুলিবিদ্ধ হন। চট্টগ্রামের পরিস্থিতি তীব্র সংঘাতময়। দেশটির অন্যত্র চলছে ব্যাপক সংঘর্ষ। আন্দোলন থামাতে বাংলাদেশ পুলিশ, ব়্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন, আনসার, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মত সশস্ত্র রক্ষী বাহিনী নামিয়েছে সরকার।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া পড়ুয়াদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে রক্ষী বাহিনী ও সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের শাখা সংগঠনগুলির। সরকারের অভিযোগ, বিএনপি, জামাত ইসলামির মত দলগুলির ছাত্র সংগঠনগুলি পড়ুয়াদের রক্তাক্ত সংঘর্ষে উস্কানি দিয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ ও বাংলাদেশ ছাত্র লীগের ওয়েবসাইট দুটি হ্যাক করা হয়েছে৷
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা আছে ৫৬ শতাংশ। এই কোটার সিংহভাগ বরাদ্দ আছে নথিভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য। সেই বরাদ্দ কমানোর দাবিতেই অনড় পড়ুয়ারা রাজপথে পুলিশের গুলির মুখে আন্দোলন চালাচ্ছেন। আদালতের নির্দেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ বজায় রাখা হয়েছে। এই সংরক্ষণ নীতির সংস্কার করে সিংহভাগ নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে করার দাবি তুলে পড়ুয়ারা আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলন ও বিক্ষোভ দমাতে সরকারে থাকা দল আওয়ামী লীগের শাখা সংগঠন ছাত্র লীগ মারমুখী নীতি নিয়েছিল। প্রথমে তাদের হামলা হলেও পরবর্তীতে আন্দোলনকারীদের পাল্টা মারে আরও রক্তাক্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।