প্রসেনজিৎ চৌধুরী: নাটোর কি শুধু বনলতা সেনের? কবির কলমে কাল্পনিক বনলতা বাঙালি মননে চির জাগরুক। তবে নাটোরের আসল দোর্দণ্ডপ্রতাপশালিনী নাটোরের ‘রানিমা’-রানি ভবানী। যিনি ‘অর্ধবঙ্গেশ্বরী’ নামে সমধিক পরিচিত। অষ্টাদশ শতকে ভারতীয় রাজন্যবর্গ ও ক্ষমতাশালী জমিদারদের মধ্যে ভবানীদেবীর সাক্ষাতে এসেও বিদেশিদের মাথার টুপি খুলে আভূমি নমস্কার জানাতে হত। ইয়োর হাইনেস…..!
এমনই রানি ভবানীর সময়টি সন্ন্যাসী-ফকির ( মতান্তরে ফকির-সন্ন্যাসী) বিদ্রোহে অগ্নিগর্ভ কাল। আর এই সময়েই জন্ম কাঁচাগোল্লার। রানি ভবানীর প্রিয় মিষ্টি কিন্তু রসগোল্লা নয় কাঁচাগোল্লা। এই বিখ্যাত মিষ্টির জন্মস্থল নাটোর। বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের নাটোরের ঐতিহ্যবাহী কাঁচাগোল্লার ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) নিবন্ধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নিবন্ধনের এই আবেদন পাঠানো হয়েছে বলে জেলাশাসক শামীম আহমেদ জানিয়েছেন। নিবন্ধন মিললেই কাঁচাগোল্লার সত্ত্বাধিকারী হবে নাটোর তথা বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রকের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর (ডিপিডিটি) বরাবর নাটোরের কাঁচাগোল্লার আবেদন পাঠানো হয়েছে।
নাটোর জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, কাঁচাগোল্লা সৃষ্টির পেছনে আছে বাংলার ইতিহাস। অর্ধবঙ্গেশ্বরী খ্যাত নাটোরের রানি ভবানীর প্রিয় খাদ্যের তালিকায় ছিল এই মিষ্টি। তাঁর প্রাসাদে নিয়মিত মিষ্টি সরবরাহ করতেন স্থানীয় মিষ্টি বিক্রেতা মধুসূদন পাল। একদিন মধুসুদন পালের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মচারীই অসুস্থ হয়ে যায়। মিষ্টি তৈরির জন্য দু’মণ ছানা রাখা ছিল। সেই ছানা নষ্ট হবে ভেবে মধুসূদন ছানার সাথে চিনি মিশিয়ে উনুনে তাপ দেন। তৈরি হয় নতুন এক মিষ্টি। এই মিষ্টি তিনি পাঠিয়ে দেন রানি ভবানীর রাজবাড়িতে। রানি ভবানী মিষ্টি খেয়ে প্রশংসা করেন। নাম জানতে চালু মধুসূদন পাল বলেন কাঁচা ছানা থেকে তৈরি বলে এর নাম কাঁচাগোল্লা। প্রায় ২৫০ বছর ধরে চলছে কাঁচাগোল্লা রসনা রাজত্ব।