শেখ হাসিনা রায়ের আগে বাংলাদেশজুড়ে হিংসা-অবরোধে উত্তপ্ত পরিস্থিতি

bangladesh-unrest-ahead-of-sheikh-hasina-verdict-violence-road-blockades

বাংলাদেশজুড়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ‘প্রধানমন্ত্রী’ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার রায় (Sheikh Hasina verdict) ঘোষণার আগমুহূর্তে। শুক্রবার সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলায় সহিংসতার খবর আসতে শুরু করেছে। কোথাও গাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে, কোথাও ককটেল বিস্ফোরণ, আবার কোথাও মহাসড়ক অবরোধ করে চলাচল বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও স্থানীয় সূত্রের বরাতে জানা গেছে, সন্ধ্যার দিকে পরিস্থিতি আরও অস্থির হয়ে ওঠে।

Advertisements

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে দেখা যাচ্ছে—বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজিত জনতা সড়কে গাছ ফেলে পথ অবরোধ করছে। কোথাও কোথাও দলে দলে লোকজন রাস্তা দখল করে স্লোগান দিচ্ছে এবং পুরনো রাজনৈতিক ক্ষোভ-বিক্ষোভ নতুন করে সামনে আসছে।

   

সরকারি সূত্রের দাবি, রায়ের আগে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে সংগঠিত মহল পরিকল্পিতভাবে এই বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। তবে বিরোধী পক্ষের অভিযোগ, এই আন্দোলন জনতার স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব না হওয়ায় উভয় পক্ষের দাবির সত্যতা এখনো স্পষ্ট নয়।

এমন উত্তেজনার মধ্যেই দেশজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে আর্মি, পুলিশ এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (BGB) একযোগে মাঠে রয়েছে। বিশেষ করে মহাসড়কগুলোতে অতিরিক্ত টহল বাড়ানো হয়েছে, যাতে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা যায় এবং কোনো ধরনের নাশকতা রোধ করা যায়।

ANI প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায় যে BGB সদস্যরা দলবদ্ধভাবে রাস্তা পরিষ্কারের কাজ করছেন। অনেক স্থানে জনতার ফেলা গাছ, বাঁশ, কাঠ ও পাথর সরিয়ে যান চলাচল সচল করার চেষ্টা করছেন নিরাপত্তা বাহিনী।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও উদ্বেগ বাড়িয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি, যা প্রশাসনের কাছে স্বস্তির বিষয়।

Advertisements

রায় ঘিরে উত্তেজনার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন—শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হওয়ায় রায়ের রাজনৈতিক অভিঘাত ব্যাপক হতে পারে। তার সমর্থক ও বিরোধী—দুই পক্ষের মধ্যেই তীব্র আবেগ ও প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর প্রস্তুতি রাখতে হচ্ছে।

এদিকে রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল, সেনসিটিভ এলাকা, কোর্ট প্রাঙ্গণ এবং সরকারি স্থাপনায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। বিশেষ অভিযান হিসেবে BGB সারাদেশে “মহাসড়ক স্থিতিশীলতা টাস্ক” পরিচালনা করছে, যেখানে মূল লক্ষ্য—মহাসড়কগুলো যেকোনো উপায়ে সচল রাখা এবং জরুরি যাতায়াত নিশ্চিত করা।

পরিস্থিতির অবনতির কারণে কয়েকটি এলাকায় গণপরিবহন কমে গেছে। বেসরকারি গাড়ি চলাচলও সীমিত হয়েছে বলে জানা গেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে—রায়ের পরে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হবে কিনা, তা নিয়ে জল্পনা চলছে।

সরকারি বার্তায় জনগণকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে এবং “আইনের প্রতি আস্থা রাখার” আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যদিকে বিরোধীরা দাবি করছে যে, সরকারের অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রদর্শন রাজনৈতিক চাপের প্রতিফলন।

এমতাবস্থায় দেশের সমগ্র রাজনৈতিক অঙ্গন রায় ঘোষণার দিকে তাকিয়ে আছে। আদালতের সিদ্ধান্ত কী হবে, সেটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ—তেমনি গুরুত্বপূর্ণ হবে পরবর্তী প্রতিক্রিয়া, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিবেশকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারে।