শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডে ইন্টারপোল সাহায্য চাইছে ঢাকা

Bangladesh's Interim Government Suspends All Administrative Activities of Awami League

ঢাকা: বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল (আইসিটি) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) এবং প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বিরুদ্ধে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে চলেছে। ট্রাইবুনালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুই অভিযুক্ত বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করায় তাদের ফেরত আনতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা আবশ্যক হয়ে উঠেছে। রায় ঘোষণার পরদিনই প্রসিকিউশন জানায় যে কনভিকশন ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে নতুন রেড নোটিশ চেয়ে ইন্টারপোলে আবেদন পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে।

Advertisements

বাংলাদেশি দৈনিক দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস জানিয়েছে, প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামীম নিশ্চিত করেছেন যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কপি সংযুক্ত করে আগেই আবেদন পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এখন যেহেতু আনুষ্ঠানিক রায় ঘোষণা হয়েছে, তাই বিচারের নতুন অবস্থান অনুযায়ী ‘কনভিকশন ওয়ারেন্ট’ যুক্ত করে নতুন রেড নোটিশের অনুরোধ জানানো হবে। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট, ট্রাইবুনাল চাইছে আন্তর্জাতিক মহলে এই রায়ের গুরুত্ব তুলে ধরে দ্রুত প্রত্যর্পণের ব্যবস্থা করতে।

   

ইন্টারপোলের বাংলাদেশি শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) এর উদ্যোগে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ চেয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছিল। সেই তালিকায় ছিলেন শেখ হাসিনা, প্রাক্তন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কামালসহ আরও বেশ কয়েকজন। যদিও আগের রেড নোটিশ নিয়ে তেমন আন্তর্জাতিক সাড়া পাওয়া যায়নি, এবার রায় ঘোষণার ফলে পরিস্থিতি অনেক বেশি স্পষ্ট এবং জরুরি হয়ে উঠেছে।

আইসিটি জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে এবং যেসব দমনমূলক অভিযান চালানো হয়, তার ‘নির্দেশক ও পরিকল্পনাকারী’ হিসেবে শেখ হাসিনার ভূমিকার প্রমাণ আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে। প্রসিকিউশনের অভিযোগ ছিল, আন্দোলন দমনে সরকারি বাহিনীর পদক্ষেপে বহু মানুষ নিহত, আহত ও আটক হন, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। সেই মামলাতেই সোমবার ট্রাইবুনাল শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে।

Advertisements

রায় ঘোষণার সময় ৭৮ বছর বয়সি শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছিলেন বলে জানা গেছে। আদালতের একাধিক সমন সত্ত্বেও তিনি ঢাকায় ফেরেননি। বিচারকদের মতে, বিচার প্রক্রিয়া এড়ানোর এই আচরণ তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে আরও শক্তিশালী করেছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক আবহে এই রায় তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আওয়ামী লীগ রায়টিকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করছে। বিপরীতে বিরোধী দলগুলো বলছে, বহু বছরের ‘রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের’ ন্যায়বিচার এখন সামনে এসেছে। জনমানসে তৈরি হয়েছে বিভক্ত মত, যা দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে আরও জটিল করে তুলছে।

এখন নজর পুরোপুরি ইন্টারপোলের দিকে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি কি নতুন রেড নোটিশ জারি করবে? আর করলে ভারত সরকার কি শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে সম্মত হবে? দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক অঙ্গনে এই প্রশ্নগুলো এখন রাজনৈতিক অস্থিরতার নতুন কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।