ভারত-বাংলাদেশ (Bangladesh) সম্পর্কের সূক্ষ্ম কূটনৈতিক ভারসাম্যে নতুন এক বিতর্কের ছায়া পড়ল। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রক আজ ঢাকায় ভারতের ডেপুটি হাই কমিশনার পবন বাদেকে তলব করে কড়া অসন্তোষ প্রকাশ করেছে — কারণ, ভারতের সংবাদমাধ্যমে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একাধিক সাক্ষাৎকার প্রকাশ ও সম্প্রচারিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য, ভারত “হাসিনাকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে”, যা তারা অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ইস্যুতে বিদেশি হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে।
🕊️ কূটনৈতিক সূত্রে খবর
ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রকের এক সিনিয়র সচিব পবন বাদেকে ডেকে পাঠান এবং আনুষ্ঠানিকভাবে “অসন্তোষের নোট” তুলে দেন।
ঢাকা সরকার দাবি করেছে, “প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে বিচারাধীন অবস্থায় আছেন। এই অবস্থায় বিদেশি সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক বার্তা প্রচার দেশের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের শামিল।”
ভারতের প্রতিক্রিয়া
দিল্লি থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তবে কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ভারতের অবস্থান একেবারে পরিষ্কার — “ভারতে সংবাদমাধ্যম স্বাধীন। কোনো সংবাদ বা সাক্ষাৎকারের অনুমতি সরকারের কাছ থেকে নিতে হয় না।”
একজন সরকারি মুখপাত্র জানান, “ভারতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত। কে কাকে সাক্ষাৎকার দেবেন, তা কোনো রাষ্ট্র নির্ধারণ করতে পারে না।”
📰 বিতর্কের সূত্রপাত
গত সপ্তাহে ভারতের একাধিক বড় সংবাদমাধ্যমে শেখ হাসিনার পুরনো ও নতুন সাক্ষাৎকার সম্প্রচারিত হয়, যেখানে তিনি বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানো এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে কথা বলেন।
এই সাক্ষাৎকারগুলির কিছু অংশ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় এবং ঢাকার রাজনৈতিক মহলে বিতর্কের সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মনে করছে, “ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের এই সম্প্রচার দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতি নষ্ট করছে।”
🌍 আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
কূটনৈতিক মহলে অনেকে বলছেন, এই ঘটনাটি দক্ষিণ এশিয়ার মিডিয়া স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সীমারেখা নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ প্রফেসর তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বাংলাদেশে এখন রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময় চলছে। সেই প্রেক্ষাপটে সংবাদমাধ্যমকে দোষারোপ করা একধরনের প্রতিক্রিয়াশীল কূটনীতি।”
তিনি আরও বলেন, “ভারতীয় সংবাদমাধ্যম স্বাধীন। হাসিনার সাক্ষাৎকার প্রচার করা কোনো সরকারি অনুমতির বিষয় নয়। তলব করে প্রতিবেশী কূটনীতিতে অযথা টানাপোড়েন তৈরি হলো।”
⚖️ দুই দেশের সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে
- গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক কিছুটা টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
- বাংলাদেশে ABT ও লস্কর জঙ্গি মুক্তি ও পুনরুত্থান নিয়ে ভারতের উদ্বেগ প্রকাশের পর
এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে “অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য না করার” সতর্ক বার্তা — এই দুই ঘটনার পর এই নতুন তলব ঘটনাটি সম্পর্ককে আরও সংবেদনশীল করে তুলেছে।
🧭 বিশ্লেষণ
বিশ্লেষকরা বলছেন, “এটি শুধু একটি মিডিয়া ইস্যু নয়, বরং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও তার আঞ্চলিক প্রতিফলনের প্রতিফলন।”
ভারত যেখানে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে অটল, বাংলাদেশ সেখানে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের আওতায় রাখছে মিডিয়াকে।
এই অবস্থায় কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষায় দুই দেশকেই সংযমী ও স্বচ্ছ অবস্থান নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকায় ভারতীয় কূটনীতিককে তলবের এই ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন নজির।
ভারতীয় কূটনৈতিক মহল বলছে, “সাংবাদিকতা ও সংবাদমাধ্যম কোনো দেশের অনুমতি নয়, স্বাধীনতার অধিকার।”


