মণি রত্নমের ‘যুবা’রা কলকাতায় যা পারেনি, ঢাকায় সেটাই করে দেখাতে চলেছে নাহিদরা?

ঠিক কুড়ি বছর আগে ২০০৪ সালে বলিউডে একটা সিনেমা রিলিজ হয়েছিল (Bangladesh)। বিখ্যাত পরিচালক মনি রত্নমের ‘যুবা’ সিনেমার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল শাসকের দুর্নীতির বিরুদ্ধে…

Photo of Md. Nahid Islam, a Bangladeshi student movement leader joining mainstream politics

ঠিক কুড়ি বছর আগে ২০০৪ সালে বলিউডে একটা সিনেমা রিলিজ হয়েছিল (Bangladesh)। বিখ্যাত পরিচালক মনি রত্নমের ‘যুবা’ সিনেমার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল শাসকের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছাত্রের প্রতিবাদ।

২ মেধাবী ছাত্র এবং একজন রাজনৈতিক দলের আশ্রিত গুন্ডার জীবন কলকাতার হাওড়া ব্রিজের উপরে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনায় অন্য মোড় নেয়। অজয় দেবগন, বিবেক ওবেরয়, অভিষেক বচ্চনে অভিনীত সিনেমাটি বর্তমান বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে আরও যেন বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

   

কারণ এই মুহূর্তে বাংলাদেশে (Bangladesh) বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কার্যত সংস্কার আন্দোলনে পরিণত হয়েছে বলে অনেকের মত। আর তার ফল হিসাবে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে বাংলাদেশ (Bangladesh) ত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। দীর্ঘ রক্তক্ষয়, হিংসা, প্রতিবাদ, আন্দোলনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলো। মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে এই নতুন সরকারের (Bangladesh) উপদেষ্টা মন্ডলীতেই লুকিয়ে রয়েছে একটা বড় চমক।

আজন্ম ‘বামপন্থী’ বুদ্ধদেবের মুখে গায়ত্রী মন্ত্র? অজানা কাহিনী শুনলে চমকে যাবেন!

সেই চমকের নাম মহম্মদ নাহিদ ইসলাম। উপদেষ্টা মন্ডলীতে সর্বকনিষ্ঠ ২৬ বছর বয়সী নাহিদ। সারা বিশ্বের কাছে নাহিদ এক আলাদা মাত্রা পেয়ে গিয়েছে। সুদর্শন ২৬ বছর বয়সী যুবক তার নেতৃত্ব দেওয়ার সহজাত ক্ষমতাবলে ছাত্র আন্দোলনকে এক অন্য মোড় দিয়েছে। এমনটাই অভিমত বিশেষজ্ঞদের। দীপ্ত কন্ঠ, চাচাছোলা বক্তব্য, অনমনীয় মনোভাবই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারী হিসেবে তাকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে।

সারা বিশ্বের দরবারে নাহিদের নাম এখন ক্রমশই আলোচিত হয়ে চলেছে। তবে এই মুহূর্তে আরও একটা জল্পনা জন্ম দিয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদে থাকা নাহিদ কী মন্ত্রিত্ব নেবেন? অদূর ভবিষ্যতে নাহিদ কিংবা সমন্বয়কারী নেতৃত্ব কী বাংলাদেশের বুকে নতুন কোনও রাজনৈতিক দলের জন্ম দেবে? বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচনে তাহলে কী নাহিদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল লড়াই করতে চলেছে?

আপাতত সেই সব নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে উঠলেও নাহিদ নিজে কিন্তু এ বিষয়ে কোনো কথাই বলছে না। তবে তার পরিষ্কার বক্তব্য ছিল যে তাদের দেওয়া প্রস্তাবনা অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতেই হবে। না হলে কিন্তু ছাত্র আন্দোলন থামবে না।

বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিখ্যাত এবং কৃতি ব্যক্তিত্বদের নিয়ে যে সরকারের রূপরেখা তৈরি করেছিল সমন্বয়কারীরা, কার্যত তার ভিত্তিতেই অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। আন্দোলন এবং তার পরবর্তী সরকার গঠনের ক্ষেত্রে এই সাফল্য নাহিদদের কি এবার সরাসরি রাজনীতিতে নামতে আরও উদ্বুদ্ধ করবে? সেই সম্ভাবনা কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

ড. ইউনূসের শপথে নেই ভারত! বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকার থেকে দূরত্ব?

ঢাকা ইউনিভার্সিটির সোশ্যিওলজি ডিপার্টমেন্টের ছাত্র নাহিদ তার সামাজিক কাজকর্মের জন্য বরাবরই বিখ্যাত ছিলেন। বাবা পেশায় শিক্ষক। ২৬ বছর বয়সী নাহিদ বিবাহিত। তার এক ছোট ভাইও আছে, যে ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করছে। ছাত্র আন্দোলনের মূল সমন্বয়কারী হিসেবে নাহিদকে বারবার পুলিশি জেরার মুখে পড়তে হয়েছে। সইতে হয়েছে অত্যাচারও।

গত ১৯শে জুলাই সবুজবাগ থেকে ২৫ জন সাদা পোশাকের পুলিশ কর্মী কার্যত নাহিদের মুখ ঢেকে, বেঁধে হাতকড়া পরিয়ে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। দুদিন বাদে অজ্ঞান অবস্থায় নাহিদকে পাওয়া যায় পূর্বাচলের একটি ব্রিজের পিলারের নিচে। এরপর হসপিটাল থেকে আবার অপহৃত হয় নাহিদ। ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্যনগরের হসপিটাল থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সমন্বয়কারীদের মুখ হিসাবে বারবার দেখা গিয়েছে নাহিদ ইসলামকেই।

ঢাকার দিকে লং মার্চের ডাক দেওয়া হোক কিংবা হাতে লাঠি তুলে নেওয়ার আহ্বান। নাহিদের বক্তৃতায় বারংবার উদ্বুদ্ধ হয়েছে আন্দোলনকারী ছাত্র জনতা। শেখ হাসিনার দলকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ আখ্যা দিয়েছিলেন। এমনকী হাসিনার দেশত্যাগের পরেও জনগণকে হুঁশিয়ারি দিয়ে সচেতন করেছিলেন। শেষ না দেখে রাজপথ ছাড়তে বারবার মানা করেছেন।

সেনাপ্রধানের সঙ্গে বসে রীতিমত দক্ষ রাজনীতিবিদদের মতোই দাবি উপস্থাপন করেছেন। সর্বোপরি তার দুর্দমনীয় নেতৃত্বের কারণেই বলা যায় আজকে বাংলাদেশে একটা নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হল বলা যায়।

লক্ষ্য অনেক, পথে বাধা তার থেকেও অনেক বেশি। দেশ হিংসায় জর্জরিত। লুঠপাট, মৃত্যু, হাহাকার যেন বাংলাদেশের এক স্বাভাবিক চিত্রে পরিণত হয়েছে। অরাজক পরিস্থিতিতে জনগণের ভরসা সেই ছাত্ররাই।

সরকারের পতন ঘটিয়ে নাহিদরা বাংলাদেশের জনগণের একটা বড় অংশের এই মুহূর্তে চোখের মণি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মণি রত্নমের সিনেমার দুই যুবক যা করতে পারেনি, তাই করে দেখিয়েছে নাহিদের মতো বাংলাদেশী ছাত্ররা।

আপাতত বাংলাদেশ আবারও সোনার বাংলা হয়ে উঠবে কিনা তার উত্তরও বোধহয় লুকিয়ে রয়েছে নাহিদদের হাতেই। রাজনীতির মূল স্রোতে নাহিদরা নতুন কোন প্রবাহ তৈরি করতে চলেছে কিনা, আপাতত সেই দিকেই তাকিয়ে গোটা বাংলাদেশ। এবং তার সঙ্গে সঙ্গে গোটা বিশ্বও।