ঢাকা: বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের এক বছর পূর্তির প্রাক্কালে বড় ঘোষণা করল অন্তর্বর্তী সরকার। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর সূচনা স্মরণে তিনটি নতুন জাতীয় দিবস ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ নয়, বরং সরাসরি ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে সরকারের পতন-এই ঘটনাকে ইতিহাসে স্থান দিতেই ইউনূস প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদ বুধবার (২৫ জুন) রাতে একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে এই তিনটি দিবস উদ্যাপনের ঘোষণা দেয়।
কোন কোন দিবস ঘোষণা করা হল?
৫ আগস্ট – ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’
গত বছরের এই দিনে ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এই দিনটিকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে, যা জাতীয় দিবসের ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
৮ আগস্ট – ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’
আওয়ামী লীগের পতনের তিন দিন পর, অর্থাৎ ৮ আগস্ট, ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। সেই দিনটিকে “নতুন বাংলাদেশ দিবস” ঘোষণা করা হয়েছে। এটি ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে উদ্যাপিত হবে।
১৬ জুলাই – ‘শহিদ আবু সাঈদ দিবস’
গণআন্দোলনের সময় রংপুরে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ছাত্র আবু সাঈদ। তাঁকে সম্মান জানিয়ে ১৬ জুলাইকে ‘শহিদ আবু সাঈদ দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে। এটিও ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত দিবসের অন্তর্ভুক্ত।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া মিশ্র
এই ঘোষণার পর রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে মনে করছেন, আন্দোলনের শহিদদের স্মরণ করা প্রয়োজনীয়, তবে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির একাংশ। তাঁদের দাবি, এভাবে কোনও ব্যক্তি বিশেষের শপথ গ্রহণের দিনকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করা অনুচিত এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
সরকারি সূত্র জানায়, এই দিবসগুলিকে যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য সকল মন্ত্রণালয় ও দপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৫ আগস্টের দিনটি আলাদাভাবে ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে এবং সে অনুযায়ী সরকারি ছুটির ঘোষণাও হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।
পটভূমিতে ছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন Bangladesh new national days
উল্লেখযোগ্য, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক রদবদলের মূল সূত্রপাত ঘটে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন থেকে। সে আন্দোলন ধীরে ধীরে গণআন্দোলনের রূপ নেয় এবং শেষপর্যন্ত অগাস্ট মাসে শেখ হাসিনার সরকার পতনে পরিণত হয়। এই আন্দোলন ও তার প্রেক্ষিতেই তৈরি হয় অন্তর্বর্তী সরকার, যার নেতৃত্বে আছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনূস।