Bangladesh journalism crisis
বাংলাদেশের সাংবাদিকতা পেশা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বিতর্ক এবং আলোচনা নতুন করে সামনে এসেছে। বিশেষ করে ড. ইউনুসের সময়ে সাংবাদিকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মতিউর রহমান চৌধুরীর মতো প্রবীণ সাংবাদিকরা বারবার উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকতা বর্তমানে এক গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, ভারতে সাংবাদিকতা যদি “গদি সাংবাদিকতার” মাধ্যমে নির্ধারিত হয়, তবে বাংলাদেশের সাংবাদিকতা “তেলবাজি সাংবাদিকতার” দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
এই আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা, নৈতিকতা এবং বাস্তব পরিস্থিতি। সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ রাখার জন্য নানা ধরনের চাপ প্রয়োগ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। মতিউর রহমান চৌধুরী সরাসরি বলেছেন যে, বাংলাদেশে সেলফ-সেন্সরশিপ বা আত্মনিরোধ বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ, সাংবাদিকরা সত্য লেখার সাহস পান না। (Bangladesh journalism crisis)
তোলাবাজি সাংবাদিকতার উত্থান Bangladesh journalism crisis
তোলাবাজি সাংবাদিকতা বলতে এমন এক ধরনের সাংবাদিকতাকে বোঝানো হয়, যেখানে সাংবাদিকরা আর্থিক বা রাজনৈতিক সুবিধার জন্য নিরপেক্ষতা বিসর্জন দেন। ড. ইউনুসের সময় সাংবাদিকদের ভূমিকা ও নৈতিকতা নিয়ে বিতর্কের মূলে রয়েছে তাদের কিছু অংশের পক্ষপাতমূলক আচরণ। অনেকেই মনে করেন, এই সময়ে সাংবাদিকতা আর জনগণের পক্ষে থাকেনি, বরং এটি নির্দিষ্ট স্বার্থ-গোষ্ঠীর হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাংবাদিকদের তোলাবাজি মানে শুধু আর্থিক সুবিধা নয়; এটি সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমেও হতে পারে। সংবাদ পরিবেশনের নামে অনেকেই মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশ করে। ফলে সত্য ঘটনাগুলো ছায়ায় পড়ে যায়, আর জনগণ বিভ্রান্ত হয়। ইউনুস জমানায় এরকম তোলাবাজির ঘটনা ক্রমাগত বেড়ে গিয়েছে, যা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।
সেলফ-সেন্সরশিপ: সাংবাদিকদের বাধা Bangladesh journalism crisis
মতিউর রহমান চৌধুরী সেলফ-সেন্সরশিপ প্রসঙ্গে বলেছেন, সাংবাদিকরা অনেক সময় নিজেদের সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উপেক্ষা করেন। এটি কেবল তাদের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করে না, বরং পুরো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। যদি সাংবাদিকরা নিজেদের কাজের ক্ষেত্রে ভয় বা চাপ অনুভব করেন, তবে তারা কিভাবে সঠিক ও নির্ভুল তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরবেন?
সাংবাদিকতার মান কমে যাওয়ার কারণ Bangladesh journalism crisis
বাংলাদেশের সাংবাদিকতার মান কেন কমে যাচ্ছে? এর পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে-
1. রাজনৈতিক প্রভাব: রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি বিশেষের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করে সাংবাদিকরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত হন।2. অর্থনৈতিক লোভ: আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে অনেক সাংবাদিক নিরপেক্ষতা বিসর্জন দেন।3. স্বাধীনতার অভাব: অনেক সাংবাদিক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না। তাদের কাজের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয় বা তারা ভীত হন।4. জনগণের আস্থার অভাব: সাংবাদিকরা যদি সত্য প্রকাশ না করেন, তবে তাদের প্রতি জনগণের আস্থা কমে যায়।
ইউনুস জমানায় সাংবাদিকতার বাস্তবতা
ড. ইউনুসের সময়ে সাংবাদিকতা কেমন ছিল? এই প্রশ্নে মতামত বিভিন্ন। কেউ কেউ মনে করেন, ড. ইউনুসের প্রভাবের কারণে সাংবাদিকদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার সুযোগ সীমিত হয়ে গিয়েছিল। তাঁর নীতির বিরোধিতা করলে বা তাঁর সমর্থকদের সঙ্গে বিরোধে জড়ালে সাংবাদিকরা সমস্যায় পড়তেন। অন্যদিকে, কিছু সাংবাদিক আর্থিক সুবিধা বা প্রভাব বিস্তারের জন্য সরাসরি তাঁর পক্ষ নিতেন।
সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ
তোলাবাজি ও পক্ষপাতিত্ব সাংবাদিকতার জন্য বড় হুমকি। যদি এই সমস্যাগুলো দূর করা না যায়, তবে সাংবাদিকতা পেশা তার মূল লক্ষ্য—সত্য প্রকাশ ও জনগণের সেবা—থেকে আরও দূরে সরে যাবে। এজন্য প্রয়োজন সাংবাদিকদের নৈতিকতার মান উন্নয়ন, স্বাধীনতা রক্ষা এবং সঠিক প্রশিক্ষণ।
ইউনুস জমানার তোলাবাজি সাংবাদিকতা শুধু একটি সময়কাল নয়; এটি বাংলাদেশের সাংবাদিকতার জন্য একটি শিক্ষা। এটি মনে করিয়ে দেয় যে, সাংবাদিকতার মূল দায়িত্ব সত্য প্রকাশ এবং জনগণের পক্ষে কাজ করা। তবে, রাজনৈতিক বা আর্থিক প্রভাব থেকে মুক্ত না হলে এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার এই সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য সাংবাদিক, নীতিনির্ধারক এবং জনগণকে একযোগে কাজ করতে হবে।
Bangladesh: Bangladesh’s journalism faces a deep crisis, with allegations of self-censorship and biased reporting. Veteran journalist Matiur Rahman Chowdhury highlights the rise of “toll journalism” during Dr. Yunus’s era, leading to public distrust and social unrest.