কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল, নিজ দেশে বিপন্ন হাসিনা ভারতে আশ্রিত ‘নিরাপদ’ কেন?

রক্তাক্ত ছাত্র-গণবিক্ষোভে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে (Bangladesh) পতন হয়েছে শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) সরকার। তিনি ভারতে আশ্রিত।  বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশে হাসিনাসহ তাঁর দলীয়…

Bangladesh Diplomatic Passport of Fugitive Sheikh Hasina

রক্তাক্ত ছাত্র-গণবিক্ষোভে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে (Bangladesh) পতন হয়েছে শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) সরকার। তিনি ভারতে আশ্রিত।  বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশে হাসিনাসহ তাঁর দলীয় নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে বিচার করার প্রক্রিয়া চলছে। রাষ্ট্রসংঘের নজরদারিতে হবে এই বিচার। এই প্রক্রিয়ার মাঝে বাংলাদেশ সরকার বাতিল করল শেখ হাসিনাসহ অন্যান্যদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট।

কূটনৈতিক পাসপোর্ট কী?
যে কোনও দেশের নাগরিকদের জন্য দুধরণের পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। সাধারণ পাসপোর্ট (জেনারেল পাসপোর্ট) পান সাধারণ যে কোনো নগরিক। আর কূটনৈতিক বা ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট পান সরকারের প্রধান, মন্ত্রী ও বিশেষ ব্যক্তি, কূটনৈতিক বিভাগের অফিসার, কর্মীরা। পাসপোর্টের মধ্যে সেটির ধরণ উল্লেখ থাকে। এই কূটনৈতিক পাসপোর্টের সুবিধা হল, অন্য দেশে বিনা ভিসায় টানা ৪৫ দিন থাকার অনুমতি।

   

শেখ হাসিনা পাসপোর্টহীন আশ্রিত
গত ৫ আগস্ট গণবিক্ষোভের মুখে দেশত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন কূটনৈতিক পাসপোর্টের মাধ্যমে। সেই থেকে তিনি ভারত সরকারের বিশেষ নিরাপত্তায় আছেন। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) পর্যন্ত একটানা ১৭দিন তিনি কূটনৈতিক পাসপোর্ট সুবিধা অনুযায়ী বিনা ভিসায় ভারতে থাকলেন। বৃহস্পতিবার থেকে তাঁর সেই লাল রঙের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করে দিল। এবার তিনি ‘পাসপোর্টহীন আশ্রিত’।

বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও বাতিল করে দেওয়া সংসদ সদস্যদের জন্য বরাদ্দকৃত সব কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এই মন্ত্রকের উপসচিব মহম্মদ কামরুজজামানের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, তার উপদেষ্টা, মন্ত্রিসভার সদস্য, সদ্য বিলুপ্ত জাতীয় সংসদের সব সদস্যসহ যেসব ব্যক্তি কোনো পদে থাকার কারণে কূটনৈতিক পাসপোর্ট গ্রহণ করেছেন তাদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট অবিলম্বে জমা দিয়ে সাধারণ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে। অন্তত দুটি তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদের পাসপোর্ট দেওয়া যেতে পারে।

আশ্রিত হাসিনাকে নিয়ে ভারতের অবস্থান
শেখ হাসিনাকে কোনওভাবেই বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠানো হবে না। নয়াদিল্লির কূটনৈতিক মহলে আলোচনা, ভারত সরকার মনে করছে, শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে রাখবে না বাংলাদেশ সরকার। কারণ, তাঁর বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাংলাদেশেই তাঁর ফাঁসির দাবি জোরালো হচ্ছে। নয়াদিল্লি ‘মিত্র’কে রক্ষা করতে তৈরি।

ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তি
দুটি দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশের তরফে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে। তেমন দাবি এলে সরাসরি ভারত সরকার সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করবে বলে কূটনীতি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এক্ষেত্রে তাঁদের যুক্তি প্রত্যর্পণ চুক্তির আইনি ধারা মেনেই শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাবে না ভারত সরকার।

কী সেই আইনি ধারা?
বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে ২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল প্রত্যর্পণ চুক্তি। প্রত্যর্পণ চুক্তিটি যখন সই হয় তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের আমলে স্বাক্ষরিত চুক্তি এখন ‘পলাতক’ ‘দেশত্যাগী’ শেখ হাসিনার রক্ষাকবচ।

প্রত্যর্পণ চুক্তির একটি ধারা হল যে ব্যক্তির হস্তান্তরের জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ যদি ‘রাজনৈতিক প্রকৃতি’র হয় তাহলে সেই অনুরোধ খারিজ করা যাবে।

চুক্তির আর একটি ধারা হল, যদি অনুরোধপ্রাপক দেশের মনে হয় “অভিযোগগুলো শুধুমাত্র ন্যায় বিচারের স্বার্থে, সরল বিশ্বাসে আনা হয়নি” তাহলে তাদের সেটি নাকচ করার ক্ষমতা থাকবে।

কূটনৈতিক মহলের অভিমত, বাংলাদেশ সরকারের তরফে শেখ হাসিনাকে ফেরত চা়ওয়ার আবেদন এলেই প্রত্যর্পণ চুক্তির দ্বিতীয় ধারাটির বলে সেই আবেদন বাতিল করা হবে।