ঢাকা: নতুন করে উত্তপ্ত হচ্ছে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল। অভিযোগ উঠেছে, বিদেশি খ্রিস্টান মিশনারিরা পরিকল্পিতভাবে দেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে ধর্মান্তর প্রচার চালাচ্ছে। বিশেষ করে বরিশাল ও খুলনা জেলার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে এই কার্যকলাপ সম্প্রতি তীব্র আকার নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, ২৪ অক্টোবর বরিশাল জেলার এক প্রত্যন্ত এলাকায় ফিনল্যান্ডের একটি মিশনারি সংস্থা ‘সালভেশন টু অল নেশন্স’ একটি বিশেষ ধর্মীয় সভার আয়োজন করে, যেখানে উপস্থিতদের ‘নতুন ধর্মের আলোয় আসার’ আহ্বান জানানো হয়।
ঘটনার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উত্তাল বাংলাদেশ। অনেকে এই ঘটনাকে “ধর্মীয় প্ররোচনা” হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন এটি বাংলাদেশের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির পরিপন্থী। স্থানীয় হিন্দু সংগঠনগুলির অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এনজিওর আড়ালে ধর্মান্তরের গোপন প্রচেষ্টা চলছে, কিন্তু প্রশাসন এ বিষয়ে প্রায় নিশ্চুপ।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, “আমাদের গ্রামে হঠাৎ করে বিদেশি মিশনারিরা আসে, খাবার ও বই দেয়, আর পরে ধর্ম পরিবর্তনের কথা বলে। কেউ প্রতিবাদ করলে নানা ভয় দেখানো হয়।” তাঁর অভিযোগ, গ্রামীণ দারিদ্র্য ও শিক্ষার অভাবকে ব্যবহার করে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ‘টার্গেট’ করছে এসব সংগঠন।
অন্যদিকে, খ্রিস্টান মিশনারিদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাঁরা কেবল মানবিক সাহায্য দিচ্ছেন, কোনো ধর্মান্তর প্রচার করছেন না। ‘সালভেশন টু অল নেশন্স’-এর এক মুখপাত্র বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, “আমরা ভালোবাসা ও শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে চাই। কেউ যদি স্বেচ্ছায় আমাদের ধর্ম গ্রহণ করতে চায়, সেটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ইস্যুটি এখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে। হিন্দু সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রশ্নে কেন্দ্র সরকার ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণাঞ্চলে হিন্দু সম্প্রদায়ের আর্থিক দুরবস্থাকে কাজে লাগিয়ে বিদেশি ধর্মপ্রচারকারীরা সুযোগ নিচ্ছে, যা ভবিষ্যতে সামাজিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে।
একজন সিনিয়র সমাজবিজ্ঞানী মন্তব্য করেছেন, “বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ হলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদেশি প্রভাব ও অর্থসাহায্যের মাধ্যমে ধর্মান্তর ইস্যুটি ক্রমশ জটিল হচ্ছে। রাষ্ট্রকে দ্রুত কঠোর নীতি নিতে হবে।”
এই ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গেছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মানবাধিকার কর্মীরা সরকারের কাছে দাবি তুলেছেন, সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে।


