কলকাতা: বর্ষা মানেই বাঙালির মনে ভেসে ওঠে দু’টি জিনিস, ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টি আর পাতে রুপোলি ইলিশ। আর সেই ইলিশ যদি হয় পদ্মার, তবে রসনার আনন্দই আলাদা। গত কয়েক বছর ধরে দুর্গাপুজোর সময় শেখ হাসিনার ‘ইলিশ কূটনীতি’র সৌজন্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে বিশেষ ভাবে ইলিশ রফতানি হতো। কিন্তু এবার হয়তো সেই ছবি বদলে যেতে চলেছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এবার ভারতে ইলিশ পাঠানোর কোনও পরিকল্পনা নেই (Bangladesh Hilsa Diplomacy End)।
ভারতে ইলিশ রফতানি করবে বাংলাদেশ?
বাংলাদেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রকের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, “এবার ভারতে ইলিশ রফতানির কোনও পরিকল্পনা নেই। গঙ্গায় ইলিশ বেড়েছে বলে খবর পাচ্ছি। ফলে ওদের আর আমাদের ইলিশের অপেক্ষা করা উচিত নয়।” তাঁর আরও বক্তব্য, “যদি আমাদের দেশে ইলিশের সরবরাহ কমে যায়, তাহলে ভারতের মতো অন্য দেশে রফতানির কোনও যুক্তি নেই।”
তিনি আরও বলেন, আপাতত শুধু সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ইলিশ পাঠানো হচ্ছে, তাও মাত্র ১১ হাজার মেট্রিক টন।
ইলিশ নয়, সম্পর্কেই টানাপড়েন
এই রফতানি-বন্ধের পিছনে যে শুধুই অভ্যন্তরীণ সরবরাহ নয়, তার আভাস মিলছে কূটনৈতিক মহলেও। ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, রাজনৈতিক অস্থিরতার আবহে ভারতে পালিয়ে আসেন হাসিনা। সেই থেকেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের সুর কড়া হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী প্রশাসনের দায়িত্ব নেওয়া নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মহম্মদ ইউনূসও পরবর্তীতে ভারতের প্রতি বিশেষ অনুরাগ দেখাননি।
যদিও গত বছর, হাসিনার পতনের ঠিক পরপরই রাজনৈতিক সৌজন্যের খাতিরে ভারতে কিছু ইলিশ পাঠানো হয়েছিল। এবার তেমন ইঙ্গিতও নেই। ফলে দুর্গাপুজোয় কলকাতা সহ গোটা বাংলার বাজারে ‘পদ্মার ইলিশ’ পাওয়ার সম্ভাবনা কার্যত নেই বললেই চলে।
‘হাসিনার ইলিশ কূটনীতি’র পরিসমাপ্তি?
বছরের এই সময়টায় পদ্মার ইলিশ রফতানির যে ঐতিহ্য তৈরি হয়েছিল, তাকে অনেকেই বলতেন ‘হাসিনার কূটনীতি’। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের বার্তা দিত সেই ইলিশ। কিন্তু নতুন বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় সেই কূটনৈতিক দান আপাতত বন্ধ হয়ে গেল বলেই ধরে নিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ থেকে ইলিশ না এলে পশ্চিমবঙ্গের বাজারে দাম চড়া হবেই। আর সেইসঙ্গে রসনাতৃপ্তির ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকছে বাঙালির উৎসবের পাত থেকে।