ঢাকা: বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সরকারের নজর এবার ইন্টারনেটভিত্তিক অ্যাপ টেলিগ্রাম ও বোটিমে। অভিযোগ, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা এই দুটি অ্যাপ ব্যবহার করে দলীয় সভা, নির্দেশনা ও এমনকি দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন। রাজধানীতে সম্প্রতি দলের ঝটিকা মিছিল থেকে গ্রেফতার হওয়া ২৪৪ জনের মধ্যে দেড় শতাধিকের ফোন থেকে এমন প্রমাণ মিলেছে।
টেলিগ্রাম ও বোটিম নিয়ে পরিকল্পনা
রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কোর কমিটির আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বৈঠকে বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচিত হয়। বৈঠকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আপাতত রাতে টেলিগ্রাম ও বোটিমের গতি সীমিত করার বিষয়ে প্রযুক্তিগত সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পর অ্যাপ দুটিকে বাংলাদেশে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
টেলিগ্রাম প্রতিষ্ঠা করেছেন রুশ বংশোদ্ভূত উদ্যোক্তা পাভেল দুরভ। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বোটিম শুধু বার্তা আদান–প্রদানই নয়, ভিডিও কল ও অর্থ লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও জনপ্রিয়। নিরাপত্তা সংস্থার দাবি, এসব অ্যাপের মাধ্যমে সারাদেশে আওয়ামী লীগের কর্মীদের সক্রিয় রাখা হচ্ছে, যা নির্বাচনী পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে।
গ্রেপ্তার ও জামিন নিয়ে প্রশ্ন Bangladesh Election App Ban
পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৩ মাসে ‘ফ্যাসিবাদে জড়িত’ অভিযোগে ৪৪ হাজারেরও বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৭৩ শতাংশ ইতিমধ্যেই জামিন পেয়েছেন। কোর কমিটির বৈঠকে প্রশ্ন তোলা হয়, কীভাবে গ্রেফতার হওয়া নেতা–কর্মীরা দ্রুত জামিন পাচ্ছেন। কিছু কর্মকর্তার মতে, স্থানীয় পাবলিক প্রসিকিউটর, আইনজীবী সমিতি ও রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহল এ প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এখন থেকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেফতার হলে তাঁদের জামিন বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
মানবাধিকারকর্মীদের পাল্টা যুক্তি
অন্যদিকে মানবাধিকারকর্মীদের দাবি, জামিন পাওয়া সাংবিধানিক অধিকার। অনেক সাধারণ মানুষও হয়রানিমূলক মামলায় জড়িয়ে পড়েছেন, ফলে তাঁদের জামিন পাওয়া স্বাভাবিক। তবে প্রকৃত অপরাধীদের ক্ষেত্রে শক্তিশালী তদন্ত ও প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা জরুরি।
সীমান্ত ও পূজা প্রসঙ্গ
বৈঠকে মিয়ানমারের আরাকান আর্মি ও আরসা–সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়েও আলোচনা হয়। দুটি সংগঠন একে অপরকে বাংলাদেশ সরকারের সহায়তা পাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এ বিষয়ে দ্রুত সরকারি অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে, যাতে প্রতিবেশী দেশে কোনো বিভ্রান্তি না ছড়ায়।
এছাড়া আসন্ন দুর্গাপূজা ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও পর্যালোচনা হয়। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, এবার পূজামণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে, তাই নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বিশেষ টহল চলবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নীরবতা বজায় রাখলেন উপদেষ্টা
প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজকে বিমানবন্দরে আটকে রাখার ঘটনাসহ খাগড়াছড়ির সাম্প্রতিক হিংসা প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা প্রশ্ন তুললেও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কোনো মন্তব্য করেননি।