‘সংস্কৃতি বাঁচাও’ স্লোগানে ছাত্র আন্দোলন: হাসিনার পতনের পর ফের অস্থির বাংলাদেশে

Bangladesh Cultural Protest

ঢাকা: বাংলাদেশে ফের অস্থিরতা। শেখ হাসিনার পতনের পর যারা ভেবেছিলেন রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ইতি ঘটবে, দেশে ফিরে আসবে স্থিতি, তাঁদের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। অর্থনীতিবিদ ও বর্তমান অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রধান মহম্মদ ইউনূসের শাসনে আবারও উত্তাল ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম। এবার রাজনৈতিক নয়,  আন্দোলনের কেন্দ্র সংস্কৃতি ও শিক্ষানীতি।

Advertisements

শিক্ষাক্ষেত্রে ‘কট্টরপন্থার ছায়া’

ইউনূস সরকারের সিদ্ধান্তে প্রাইমারি স্কুলে শারীর শিক্ষার (PT) শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ হওয়ার পর থেকেই বিতর্ক শুরু। প্রশাসনের দাবি, এটি কেবল বাজেট ও প্রশাসনিক কারণে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ছাত্র ও সংস্কৃতিকর্মীরা বলছেন, “এটি আসলে ইসলামি কট্টরপন্থী সংগঠনগুলির চাপের ফল।”

   

একইসঙ্গে স্কুলে গানের শিক্ষক নিয়োগও বন্ধ করা হয়েছে— যা আন্দোলনের আগুনে ঘি ঢেলেছে। প্রতিবাদীদের অভিযোগ, এটি বাংলাদেশের মৌলিক সংস্কৃতির ওপর সরাসরি আঘাত। দেশের গান, শিল্প ও থিয়েটারের ঐতিহ্য মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে সরকারি মদতে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছড়িয়ে পড়ছে আন্দোলন Bangladesh Cultural Protest

১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবারও আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু। বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক ‘অপরাজেয় বাংলা’র নীচে বসে গাইছেন মুক্তিযুদ্ধের গান— “যে গান রক্তে লেখা, তা কেউ মুছে ফেলতে পারবে না।”
তাঁদের মূল বক্তব্য— “যারা স্বাধীনতার নামে লড়েছিল, তারা আজ সংস্কৃতি রক্ষার লড়াই লড়ছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার বিভাগের অধ্যাপক ইসরাফিল শাহিন বলেন, “শিক্ষা যদি সংস্কৃতিবিহীন হয়, তবে সেটা কেবল একটা খোলস, ভেতরে কিছুই থাকে না।”
অন্যদিকে সঙ্গীত শিক্ষক আজিজুর রহমান তুহিন মন্তব্য করেন, “শিল্প-সংস্কৃতি মানেই মানবতার ভিত্তি— আর সেই ভিত্তিকেই নাড়া দেওয়া হচ্ছে।”

“সংস্কৃতি ছাড়া জাতি টেকে না”

Advertisements

চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা— একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে বিক্ষোভ, গান ও কবিতা পাঠে প্রতিবাদ।
আন্দোলনকারীদের দাবি স্পষ্ট—
স্কুলে অবিলম্বে সঙ্গীত ও শারীর শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগ পুনরায় চালু করতে হবে।
 শিক্ষা থেকে কট্টর ধর্মীয় হস্তক্ষেপ তুলে দিতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রফিক হাসান মন্তব্য করেছেন, “বাংলাদেশ একসময় সংস্কৃতির আন্দোলন থেকেই জন্ম নিয়েছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সেই ঐতিহ্যই বিশ্বাসের নামে মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে।”

পাকিস্তানপন্থী প্রভাবের আশঙ্কা

বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে ইউনূস সরকারের পাকিস্তানপন্থী নীতি ও ধর্মীয় সংগঠনগুলির প্রভাবই এই সাংস্কৃতিক সংকটের মূল উৎস।
যে বাংলাদেশ একদিন ধর্মনিরপেক্ষতার মশাল জ্বালিয়েছিল, আজ সেই দেশেই সংস্কৃতির মূলে প্রহার পড়ছে।

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজপথে আন্দোলনের মুখে নতুন প্রজন্ম। তাঁদের লড়াই আর কেবল রাজনৈতিক নয়, এটি বাংলাদেশের আত্মা, তার সংস্কৃতি ও ইতিহাস রক্ষার লড়াই।