জাতি হিসেবে পদ্মাপারের বাংলাভূমিতে আর ‘বাঙালি’ শব্দ থাকবে না। এমনই সুপারিশ ঘিরে বাংলাদেশ (Bangladesh) তোলপাড়। বাংলাভাষী এই দেশটির জনগণ সরকারিভাবে নিজেদের আর বাঙালি বলতে পারবেন না। তারা বাংলাদেশি হিসেবেই পরিচিত হবেন। (bangladesh Constitutional Reform Commission recommends dropping the word Bengali)
বাংলাদেশে গতবছর (২০২৪) রক্তাক্ত গণবিক্ষোভে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলা টানা পনের বছরের সরকারের পতন হয়েছে। এরপর নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে চলছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকার বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কারের জন্য সুপারিশ কমিশন গঠন করে।
বাংলাদেশের জনগণের নাগরিকত্ব হিসেবে ‘বাঙালি’ বাদ দিয়ে ‘বাংলাদেশি’ করার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। এই কমিশন আজ বুধবার সকালে তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়।
বাংলাদেশের অন্যতম সংবাদপত্র ‘সমকাল’ জানিয়েছে, প্রতিবেদনে দেওয়া সুপারিশে ‘বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি…’ এই বিধান বিলুপ্ত করার সুপারিশ করেছে কমিশন। তারা বর্তমান অনুচ্ছেদ ৬ (২) ‘বাংলাদেশের নাগরিকগণ “বাংলাদেশি” বলে পরিচিত হবেন’ হিসেবে প্রতিস্থাপন করার সুপারিশ করা হয়েছে।
পাল্টে যাবে বাংলাদেশের সাংবিধানিক পরিচয়?
বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তন করে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ করার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। বর্তমানে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ নাম আছে। এই নাম পরিবর্তন করার পাশাপাশি ‘প্রজাতন্ত্র’ পরিবর্তে ‘নাগরিকতন্ত্র’ করার প্রস্তাব করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন।তবে ইংরেজি সংস্করণে ‘রিপাবলিক’ ও ‘পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ শব্দ থাকছে।
বিবিসি জানিয়েছে, গত পাঁচই অগাস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি ক্রমশ জোরালো হয়ে ওঠে দেশটিতে। সেই প্রেক্ষাপটে প্রাথমিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সংস্কারে ছয় বিশিষ্ট নাগরিককে দায়িত্ব দেয়ার ঘোষণা করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
সংবিধান পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করে সংস্কারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে অধ্যাপক আলী রীয়াজকে প্রধান করে নয় সদস্যের সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিটি তিন মাস ধরে সাধারণ নাগরিক, রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনদের কাছ থেকে মতামত সংগ্রহ করে।প্রায় এক লাখ নাগরিকের মতামত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন। সেই সাথে তারা বিভিন্ন দেশের সংবিধানও পর্যালোচনা করেন।
ডয়েচভেল সংবাদ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরির জন্য আইন, বিচার ও প্রশাসনের মধ্যে একটি কাঠামোগত ভারস্যাম্য তৈরি করার প্রস্তাবও করেছে কমিশন৷ এছাড়া রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও দায়িত্বের ভারসাম্যের প্রস্তাব করা হয়েছে৷
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ চালুর সুপারিশ করা হয়েছে৷ বলা হয়েছে, এই সংসদে আসনসংখ্যা হবে ৫০৫ আসন৷ এরমধ্যে উচ্চকক্ষে ১০৫ আসন এবং নিম্নকক্ষে ৪০০ আসন থাকবে৷ নিম্নকক্ষের ৪০০ আসনের মধ্যে ১০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত৷ এই আসনগুলোতে সরাসরি নির্বাচন হবে৷