বাংলাদেশের (Bangladesh) বর্ষবরণ উৎসবের প্রতি বছরই থাকে এক বিশেষ আকর্ষণ, বিশেষত “থার্টি ফার্স্ট নাইট” বা নববর্ষের আগের রাত। তবে এবছর এই উৎসবের পরিবেশে এক নতুন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের পুলিশ প্রশাসন নতুন করে একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, যার ফলে কক্সবাজার, টেকনাফসহ দেশের জনপ্রিয় সৈকতগুলিতে প্রকাশ্যে গানবাজনা এবং আতশবাজি ফোটানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা পা-াল করার মূল উদ্দেশ্য হলো নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং জনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মহম্মদ সালাউদ্দিন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ৩১ ডিসেম্বর রাতে সৈকতের পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে উন্মুক্ত স্থানে কনসার্ট বা অন্য কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে না। শুধু তাই নয়, সৈকতে আতশবাজি বা পটকা ফাটানোও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের পিছনে যে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করা হয়েছে, তা অত্যন্ত স্পষ্ট।
প্রশাসন জানায়, সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা যাতে কোনও ধরনের অঘটন ঘটিয়ে না ফেলে, সে জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে, জনসমাগমের সময় দুর্ঘটনা এবং অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যা শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাই, প্রশাসন জনসাধারণের স্বার্থে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে, কিছু ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষ অনুমতি নিয়ে কিছু বিলাসবহুল হোটেল এই রাতে কনসার্ট আয়োজন করতে পারবে, কিন্তু এসব অনুষ্ঠান বিশেষ পুলিশি নিরাপত্তা পরিবেষ্টিত থাকবে।
এছাড়াও, সৈকতগুলিতে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পুলিশ ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কক্সবাজার এবং টেকনাফের মতো পর্যটন কেন্দ্রে রাতভর চলা পার্টি, ভিড়, এবং অযাচিত অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সজাগ থাকবে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় যে কোনও ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা রুখতে পুলিশ বাহিনী আগে থেকেই প্রস্তুত থাকবে।
এমনকি, প্রশাসনের তরফ থেকে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তারা আহ্বান জানিয়েছে, সকলকে যেন এই সময়ে সৈকতের কাছে যাওয়ার আগে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে চলে। যেহেতু এ ধরনের উৎসবে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়, সেক্ষেত্রে কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা বা অপ্রত্যাশিত ঘটনা এড়াতে হবে।
তবে, কিছু ব্যক্তি এবং পর্যটক এই নতুন বিধিনিষেধকে সমালোচনা করছেন। তাদের মতে, প্রতি বছরই এই সময় কক্সবাজার ও অন্যান্য সৈকতগুলোতে জমজমাট আয়োজন চলত, যেখানে দর্শনার্থীরা মুক্ত পরিবেশে উৎসব উপভোগ করতেন। তাই, এখন এই বিধিনিষেধ তাদের আনন্দে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
এমনকি, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে হোটেল ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অনেক হোটেল নিজেদের বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করে প্রচুর লাভ আয় করত, কিন্তু এখন সেটি সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে।
এত কিছুর পরও, প্রশাসনের উদ্দেশ্য একটাই — দেশের মানুষের নিরাপত্তা এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখা। এর ফলে কিছু সময়ের জন্য ক্ষতির মুখে পড়লেও, দীর্ঘমেয়াদে নিরাপদ এবং শান্তিপূর্ণ উৎসবের পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।