প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে টানা প্রায় সাত বছর ধরে প্রেমিকার অপেক্ষায় দিনরাত সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমনই এক ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশের(Bangladesh) ময়মনসিংহে। এমন অসাধ্য সাধন করেছেন নুরুল আমিন নামের ময়মনসিংহের বাসিন্দা। যেখানে টানা এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার কথায় মানুষ চিন্তায় পড়ে যায় সেখানে ৪-৫ ঘন্টা নয় দিনের প্রায় ২০ থেকে ২৩ ঘণ্টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় এই প্রেমিককে। অধিকাংশ সময়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় এই ব্যক্তিকে। খাওয়া দাওয়া ঘুম কিছুরই ঠিক নেই নিজের বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে লুঙ্গি পড়ে গায়ে লাল কালো চাদর জড়িয়ে সব সময় দাঁড়িয়ে থাকেন নুরুল আমিন নামের এই পাগল প্রেমিক।
এ এক জায়গাতেই তিনি দাঁড়িয়ে রয়েছেন সাত বছর ধরে। এলাকাবাসীর ধারণা প্রেমিকার অপেক্ষাতেই দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। ভুল করে কিংবা আনমনে কখনো কখনো বসে যান বা ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। তবে এসে বসা বা ঘুমানো দীর্ঘস্থায়ী হয় না পরক্ষণেই উঠে দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি। নুরুল আমিন বলেন তিনি যখন চাকরি করতেন তিনি একটা মেয়েকে পছন্দ করতেন। তিনি জানান সে সময় থেকেই তার এরকম সমস্যা শুরু হয়েছে। এটাকে তিনি তার মানসিক সমস্যা বলে মনে করেন। সুস্থ স্বাভাবিক থাকাকালে নুরুল আমিন চাকরি করতেন নৌসিনদীর একটা টেক্সটাইলে। সেখানেই এলাকার এক মেয়ের প্রেমে পড়েন তিনি। হঠাৎ সে মেয়ের অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে গেলে ভাবে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।
নুরুল আমিন জানান, মেয়ের পরিবারকে সে বিয়ের কথা জানিয়েছিল কিন্তু তারা তাকে ভুল বুঝে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেন। তারপর সেই মেয়েকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই তার জীবনের এই সমস্যা। আর কোন কাজেই মন বসাতে পারতেন না তিনি। তখন থেকেই সব সময় অস্থিরতা কাজ করতো। বসে শুয়ে কোন ভাবেই মনের অস্থিরতা দূর করতে পারছিলেন না তিনি। মনে অস্থিরতার কারণে ঘরে মন টিকতো না তার। তাই ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে পারতেন না দুশ্চিন্তায় ঠিকমতো ঘুমাতেও পারতেন না।
নুরুল আমিনের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চৌতনখালি গ্রামে। মা আর ভাইকে নিয়ে ছোট্ট একটা টিনের ঘরে থাকেন নুরুন। হতদরিদ্র নুরুনের মাও মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। স্থানীয়রা জানান, ভাঙ্গা টিনের ঘর ছাড়া নুরুন আমিনের কিছুই নেই। এমন কি ঠিকমত তিন বেলা খাবার জোটে না তাদের। পরিবারের তিনজন সদস্যের দুজনই মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। তা সত্ত্বেও তাদের ভাগ্যে জোটে না কোন সরকারি ভাতা বা কার্ড। স্থানীয় ইউপি সদস্য নয়ন মিঞা জানেন, নুরুন আমিন মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী তার মা ও প্রতিবন্ধী। তাদের কোন জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকায় কোনো সরকারি ব্যবস্থা করা যাচ্ছেন না বলে জানান তিনি। নুরুন আমিনদের পরিবারকে শীঘ্রই সরকারি ভাতার আওতায় আনার চেষ্টা করা হবে। বর্তমানে পাশের এক উপজেলায় পীরের কাছে চিকিৎসা করাচ্ছেন নুরুন আমিন। এলাকাবাসী মনে করেন সঠিক চিকিৎসা পেলে আবার নিজের অবস্থায় ফিরে আসবেন নুরুন আমিন।