প্রসেনজিৎ চৌধুরী: গণবিক্ষোভে বাংলাদেশ (Bangladesh) থেকে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) ভারতে আশ্রিত। গত ৫ আগস্ট তিনি দেশত্যাগ করেছেন। তার বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর একাধিক অভিযোগে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালে মামলা চালাচ্ছে। দেশত্যাগ করার তিনমাস পরে রবিবার (১০ নভেম্বর) হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা জমায়েত ও মিছিল করবেন। আওয়ামী লীগ সূত্রে খবর, এদিনই ভারত থেকে বিশেষ বার্তা দিতে পারেন শেখ হাসিনা।
ঐতিহাসিক গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার দিবস:
১০ নভেম্বর বাংলাদেশে “গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার দিবস” পালিত হয়। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে ‘স্বৈরাচারী ও সামরিক’ শাসন চালানোর অভিযোগ এনে সমাবেশ করেছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। আন্দোলন চলাকালীন পুলিশের গুলিতে নিহত হন নূর হোসেন। তিনি দেহে লিখে রেখেছিলেন ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। তার গুলিবিদ্ধ দেহের ছবি পরে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়েছিল।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শক্তি প্রদর্শন
দিনটি স্মরণে রেখে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলি প্রতিবারই সমাবেশ করে। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার দিবস’ ঘিরে টান টান উত্তেজনা। কারণ, এবার স্বৈরাচার চালানোয় অভিযুক্ত গণবিক্ষোভে একটানা তিন দফায় সরকার গড়ে আওয়ামী লীগ ও পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ভারতে আছেন। সেখান থেকে বারবার দলীয় নেতাদের উজ্জীবিত করে চলেছেন। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অস্তিত্ব সংকট শুরু হয়েছে। ক্ষমতা হারানোর পর রবিবারই দলটির প্রথম প্রকাশ্য সমাবেশ।
হাসিনা বিরোধী পড়ুয়াদের পাল্টা সমাবেশ:
ভারত সরকারের আশ্রয়ে থাকা শেখ হাসিনা কি এদিন কোনও বার্তা দেবেন? এই প্রশ্নে সরগরম বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল। শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার চলছে। এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের সমর্থনকারী ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ মঞ্চ পাল্টা সমাবেশ করার ডাক দিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ জানান, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে রবিবার ঢাকার গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে জমায়েত অনুষ্ঠিত হবে। এই মঞ্চের আহ্বায়করাই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মূল খুঁটি বলে পরিচিত।
গত জুলাই আগস্ট মাসে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে আসন সংরক্ষণ নিয়মের সংস্কার তথা কোটা সংস্কার চেয়ে তৎকালীন হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীদের বিক্ষোভ ক্রমে গণবিক্ষোভে পরিণত হয়েছিল। বিক্ষোভ দমনে গুলিতে শত শত নিহত হন। একপর্যায়ে ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা।
পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অবস্থান:
বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে রাজনৈতিক শক্তির কেন্দ্রে উঠে এসেছে পূর্বতন আরও এক শাসক দল বিএনপি। দলটির শীর্ষ নেত্রী খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। তিনিও ১৯৮৭ সালের আন্দোলনে নেমেছিলেন। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া বারবার যৌথ আন্দোলন করেছিলেন। এরপর বেগম জিয়ার বিএনপি জোট সরকার চলেছিল। তৎকালীন বিরোধী নেত্রী হাসিনা পরে যখন সরকার গড়েন তখন বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া একাধিক দুর্নীতির মামলায় জেলে ছিলেন। শেখ হাসিনার পতনের পর তিনি অভিযোগ মুক্ত। তার দল বিএনপি এদিন মিছিল করবে।
জামাত ইসলামির অবস্থান:
শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে ফের রাজনৈতিক শক্তির আরও একটি খুঁটি হয়েছে জামাত ইসলামি। হাসিনার আমলে এই সংগঠনটি নিষিদ্ধ হয়েছিল। যদিও তার আগে বিএনপির সঙ্গে জোট করে জামাত ইসলামি একবার সরকার গড়েছিল। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংঘর্ষের সময় জামাত ইসলামির বিরুদ্ধে পাক সরকারের মদত ও গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনে একাধিক জামাত নেতার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল হাসিনা সরকার। বাংলাদেশ জামাত ইসলামির আমির তথা প্রধান নেতা ড. শফিকুর রহমান জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার সরকার স্বৈরাচারী ছিল। জনতা আগামী নির্বাচনে নতুন সরকার বেছে নেবেন।