জনতার ‘হত্যাকারী’ অভিযুক্ত হবেন শেখ হাসিনা, বাংলাদেশে এনে ‘ফাঁসি দিতে’ আইনি প্রস্তুতি

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: টানা চতুর্থ বার ক্ষমতা দখল করার মাত্র সাত মাসের মাথায় শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ‘গণহত্যাকারী’ হিসেবে চিহ্নিত। অন্তর্বর্তী সরকার পলাতক হাসিনার বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ আইনে…

attempts to hang sheikh hasina back to Bangladesh began

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: টানা চতুর্থ বার ক্ষমতা দখল করার মাত্র সাত মাসের মাথায় শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ‘গণহত্যাকারী’ হিসেবে চিহ্নিত। অন্তর্বর্তী সরকার পলাতক হাসিনার বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ আইনে মামলা করার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের সংবিধান ও ফৌজদারি আইনি ধারাগুলি বিশ্লেষণ করে দণ্ডিত করা হবে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীকে। প্রয়োজনে সংবিধানের ধারা সংশোধন করতে পারে গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত বাংলাদেশের নতুন সরকার।

অভিযোগ,সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলন দমনে নিজ দল আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের ভয়াবহ হামলার সময় নীরব ছিলেন শেখ হাসিনা। কমপক্ষে তিনশ অধিক আন্দোলনকারী (পড়ুয়া ও বিভিন্ন দলের সমর্থক, সাধারণ মানুষ) নিহত বলেই জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলো। বিক্ষোভের শেষ দুদিন ছিল প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে নির্বিচারে খুনের ঘটনা।

   

গণবিক্ষোভ চলাকালীন ভিডিও বিশ্লেষণে উঠে আসছে, আওয়ামী লীগের নেতা, যুব ও ছাত্র নেতারা লাগাতার গুলি চালিয়ে মানুষ মারছে। জনতার পাল্টা হামলায় বহু আওয়ামী লীগ নেতা, সমর্থক নিহত। এই রক্তাক্ত পরিস্থিতির জন্য একমাত্র শেখ হাসিনা দায়ী বলে দাবি করেছে বিএনপি, জামাত ইসলামি, বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মঞ্চ।

বাংলাদেশের হিন্দুদের প্রাণসুরক্ষা, বড় দাবি বাংলার বিজেপি সাংসদের

১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশ গঠিত হয়। সে দেশে একাধিক গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। সামরিক বাহিনীতে বিদ্রোহ হয়েছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী পুত্র আত্নীয়দের সেনা অভ্যুত্থানে খুন করা হয় ১৯৭৫ সালে। মুজিব পরবর্তী সময়ে ১৯৮০ সালে সেনাশাসক ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকেও সেনাবিদ্রোহে খুন করা হয়। এরপর ক্ষমতাদখলকারী অপর সেনাপ্রধান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়। এবার ২০২৪ সালে গণবিক্ষোভে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের তাণ্ডবের নেপথ্যে কী পাকিস্তান? প্রশ্ন রাহুলের, কী জবাব জয়শঙ্করের?

টানা চারবার ক্ষমতা দখলকারী শেখ হাসিনা তাঁর শাসনকালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী জামাত ইসলামি নেতৃত্বকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আওতায় এনে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। ক্ষমতাচ্যুত হবার দিনকয়েক আগে জামাত ইসলামি সংগঠনকে সন্ত্রাস দমন আইনে নিষিদ্ধ করেছিলেন। বলেছিলেন পাকিস্তানের প্রেতাত্মাদের ঠাঁই নেই বাংলাদেশে। গণবিক্ষোভের ধাক্কায় শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর তাঁর সরকারের অবলুপ্তি ঘটেছে। ফলে হাসিনার আমলে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি আর কার্যকরী হবে না বলেই বাংলাদেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞদের দাবি। সেক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা হটে যাচ্ছে জামাত ইসলামির। সংগঠনটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শরিক।

সোমবার (৫ আগস্ট) শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পালানোর পর সেদেশে জনতার বিজয় উল্লাস ও ধংসাত্মক কাণ্ড দেখা গিয়েছে। জনতার দাবি গণহত্যাকারী-স্বৈরাচারীর পতন হয়েছে। সূত্রের খবর সেই দাবিকে মান্যতা দিতে চলেছে জামাত ও বিএনপি নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।

দুর্নীতির মামলায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির সুপ্রিমো খালেদা জিয়া বন্দিদশা থেকে মুক্ত। তিনি শেখ হাসিনার সরাসরি প্রতিপক্ষ। বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নাশকতা ঘটানোর ষড়যন্ত্রে অভিযুক্ত ছিলেন। সেই মামলাও আর টিকছে না। খালেদা পুত্র তারেক রহমান নির্বাসন কাটিয়ে বাংলাদেশে ফিরবেন। তাঁকে মুখ করে পরবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতা দখল করার পথে নিয়েছে বিএনপি। জানা যাচ্ছে, হাসিনা পালিয়ে যেতেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ আওয়ামী লীগ ভেঙে চুরে গেছে। তাদের পক্ষে নির্বাচনে যাওয়ার পরিস্থিতি এখনই নেই। দলটি রাজনৈতিক অস্তিত্ব হারাতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।