‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ পাকিস্তানের শয্যাসঙ্গী হতে চাইবেই বাংলাদেশ: তসলিমা নাসরিন

গণবিক্ষোভে শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) জমানা শেষ হয়ে গেছে (Bangladesh) বাংলাদেশে। তিনি ভারতে আশ্রিত। হাসিনা সরকারকে স্বৈরাচারী তুলনা করার পাশাপাশি বর্তমান নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের (Muhammad…

গণবিক্ষোভে শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) জমানা শেষ হয়ে গেছে (Bangladesh) বাংলাদেশে। তিনি ভারতে আশ্রিত। হাসিনা সরকারকে স্বৈরাচারী তুলনা করার পাশাপাশি বর্তমান নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের (Muhammad Yunus) অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বাংলাদেশ ইসলামি মৌলবাদের ‘জিহাদিস্তান’ হয়ে যাচ্ছে বলে কটাক্ষ করেছেন লেখিকা (Taslima Nasrin) তসলিমা নাসরিন। তিনি যে কোনো ধর্মীয় মৌলবাদের বিরোধী। দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত। এবার তাঁর কটাক্ষ, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান শয্যাসঙ্গী হতে চাইছে।

শেখ হাসিনার জমানায় সরকারি চাকরিতে আসন সংরক্ষণ নিয়মের সংস্কার চেয়ে পড়ুয়াদের আন্দোলন ক্রমে স্বৈরাচারের বিরোধিতার বিক্ষোভে পরিণত হয়েছিল। গত জুলাই-আগস্ট মাসের রক্তাক্ত বিক্ষোভের ধাক্কায় ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হয়েছেন ড. মুহাম্মদ ই়উনূস। তিনিও তসলিমা নাসরিনের বিশ্লেষণে ইসলামি মৌলবাদীদের বন্ধু।

   

১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেঙে রক্তাক্ত সংঘর্ষের পর বাংলাদেশ তৈরি হয়েছিল। এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল আওয়ামী লীগ। এই দলের নেত্রী শেখ হাসিনার জমানায় পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক তেমন দৃঢ় ছিল না। তবে হাসিনার পতনের পর পাকিস্তানের তরফে বাংলাদেশকে বারবার কূটমৈতিক সৌহার্দ্যময় সম্পর্কের বার্তা দেওয়া হচ্ছে। পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ দুই দেশের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধিতে বার্তা দেন।

সম্প্রতি দেখা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে দুই দেশের পড়ুয়াদের একটি ছবি। ছবিতে দাবি করা হয় বন্যা ত্রাণের জন্য সাহায্য চলছে। এর প্রেক্ষিতে তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বাংলাদেশের পতাকার পাশাপাশি পাকিস্তানের পতাকা ধরে আছে কয়েকজন, এই দৃশ্য দেখে অনেকের প্রশ্ন জেগেছে, কী কারণে হঠাৎ পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে ফটো তোলা! কেউ কেউ বলছে বাংলাদেশে যে পাকিস্তানি ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করছে, তারা বন্যার্তদের সাহায্য করেছে, সে কারণেই পতাকা নিয়ে ফটো তুলেছে। বন্যা দেখা যাচ্ছে না, বন্যার্ত দেখা যাচ্ছে না, ত্রাণসামগ্রি দেখা যাচ্ছে না, অর্থ সাহায্য দেখা যাচ্ছে না, দেখা যাচ্ছে শুধু হিজাব আর পতাকা! একটু খটকা লাগে বৈকি! তারপরও, দেশিরাই যেখানে নানা কারণে পাকিস্তানের পতাকা উঁচু করে জয়ধ্বনি দেয়, সেখানে পাকিস্তানিরা পতাকা হাতে নিয়েছে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কেউ কেউ আবার বলছে, আসল কথা হলো, বাংলাদেশের পাকিস্তানপ্রীতি বেড়েছে, বাংলাদেশ পাকিস্তান হতে চাইছে।”

তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, “পাকিস্তান একটি ফেইল্ড স্টেট। এটি কারও কাংক্ষিত হতে পারে না। পাকিস্তান ভিক্ষে করে খায়, অথবা জঙ্গি বেচে খায়। অর্থনীতি এবং রাজনীতি পাকিস্তানের চেয়ে বরং বাংলাদেশে বেটার ছিল। তাহলে এত পাকিস্তান প্রীতিই বা কেন, পাকিস্তান নিয়ে ভয়ই বা কেন। বাংলাদেশ যদি পাকিস্তানকে জড়িয়ে ধরে আনন্দ পায়, পাক। এক ফেইল্ড স্টেট আরেক ফেইল্ড স্টেটের শয্যাসঙ্গী হতে তো চাইবেই। তাছাড়া মুসলিম ব্রাদারহুড বলে তো একটা কথা আছে। “

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সম্পর্ক নিয়ে তসলিমার কটাক্ষ, “বাংলাদেশ যোগ্য ছিল না একাত্তরে একটি স্বাধীন দেশ পাওয়ার। ভারতীয় সেনাবাহিনী স্বাধীন করে না দিলে অবশ্য পেত না স্বাধীনতা। দরকার ছিল আরও দীর্ঘ দীর্ঘকাল পাকিস্তানের গোলামী করার। তারপর কারও সাহায্য ছাড়াই বছরের পর বছর যুদ্ধ করে লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তের ওপর যদি স্বাধীনতা অর্জন করতো, তাহলে মর্যাদা বুঝতো স্বাধীনতার। বুঝতো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে কী।”

তিনি কটাক্ষ করে লিখেছেন, “এক ফেইল্ড স্টেট আরেক ফেইল্ড স্টেটের বন্ধু হলে তুমি কে আমি কে আপত্তি করার?”