চলছে গুলি। পড়ছে লাশ। বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার ও মেধার ভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন রক্তাক্ত মোড় নিল মঙ্গলবার। একদিনেই নিহত একাধিক। জখম বহু। বাংলাদেশ (Bangladesh) অগ্নিগর্ভ।
পরিস্থিতি এতটাই ঘোরালো। পদ্মাপারের বাংলায় থাকা বহু ভারতীয় নাগরিক এই মুহূর্তে নিজ দেশে ফিরতে চাইলেও পারবেন না। কারণ, রেল ও সড়কপথগুলি অবরুদ্ধ। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে অন্যান্ন বিভাগের সংযোগ বিচ্ছিন্ন। মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীরা আটকে দেন ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস।
বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিতসা করানো, ব্যবসায়িক কাজ ও আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে বহু বাংলাদেশি আসেন। বহু ভারতীয় যান বাংলাদেশে। এছাড়াও অন্যান্য দেশের নাগরিকরাও আছেন। নিজ নিজ দেশের দেশগুলির দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তারা। বিক্ষোভে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশে থাকা ভিনদেশিদের সতর্ক থাকতে বলছে দূতাবাসগুলি।
বাংলাদেশ সরকারের কোটা নীতির কারণেই বিক্ষোভ। আদালতের নির্দেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ বজায় রাখা হয়েছে। এই সংরক্ষণ নীতির সংস্কার করে সিংহভাগ নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে করার দাবি তুলে পড়ুয়ারা আন্দোলন শুরু করেন। সেই আন্দোলন দ্রুত দেশ জুড়ে ছড়ায়। আন্দোলন ও বিক্ষোভ দমাতে সরকারে থাকা দল আওয়ামী লীগের শাখা সংগঠন ছাত্র লীগ মারমুখী নীতি নেয়। প্রথমে তাদের হামলা হলেও পরবর্তীতে আন্দোলনকারীদের পাল্টা মারে আরও রক্তাক্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশে সরকারি চাকরির কোটায় নিয়োগ হয় অর্ধেকের বেশি। সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের থেকে মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত ৮০ শতাংশ ছিল কোটা আরও ২০ শতাংশ পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হত। ১৯৭৬ সালে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ৪০ শতাংশ হয়। কোটায় নিয়োগ হত ৬০ শতাংশ। ১৯৮৫ সাল থেকে কোটা দাঁড়ায় ৫৬ শতাংশ। এই কোটার সিংহ ভাগ বরাদ্দ আছে নথিভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, সরকার এই কোটা নীতি সংস্কার করে কোটার ভাগ কমাক ও মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ বাড়াক। তবে আদালতের রায়ে কোটা নিয়ম বহাল থাকে। এরপরেই শুরু বিক্ষোভ। কোটা সংস্কারের বিষয়ে সরকার সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটিয়ে কিছুই করবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
কোটা বিরোধী আন্দোলন থামাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নামিয়েছে আধা সেনা ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বাহিনীকে। তবে বিক্ষোভ আন্দোলনে বোমা নিক্ষেপ, গুলি চালানো, একে অন্যকে কোপানো চলছেই।