অমর্ত্য সেনের কড়া সমালোচনায় বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে নয়া বিতর্ক

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নির্যাতনের বিষয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে, হিন্দু মন্দির ভাঙচুর, খুন-ধর্ষণ এবং ধর্মীয় সহিংসতার নানা ঘটনার…

Amartya Sen Reacts to the Current Situation in Bangladesh, Expresses Concern Over Minority Persecution

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নির্যাতনের বিষয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে, হিন্দু মন্দির ভাঙচুর, খুন-ধর্ষণ এবং ধর্মীয় সহিংসতার নানা ঘটনার পটভূমিতে তাঁর এই উদ্বেগ সামনে এসেছে।

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নিজের চিন্তাভাবনা প্রকাশ করতে গিয়ে, অমর্ত্য সেন একদিকে যেমন জামাতের ভূমিকার দিকে আঙুল তুলেছেন, তেমনি তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি নিয়েও কথা বলেছেন।

kolkata24x7-sports-News

   

অমর্ত্য সেন বলেন, ‘‘বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি আমাকে খুবই উদ্বিগ্ন করেছে। আমি বাঙালি, ঢাকায় আমি অনেক সময় কাটিয়েছি, সেখানেই আমার স্কুল জীবনের শুরু। আমার পৈতৃক বাড়ি মানিকগঞ্জে, সেখানে আমি নিয়মিত যেতাম। মায়ের দিক থেকেও বিক্রমপুরে, বিশেষ করে সোনারাংয়ে যেতাম। সুতরাং, এই সব জায়গার সঙ্গে আমার গভীর সম্পর্ক।’’ তাঁর এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর উদ্বেগের মাত্রা শুধুমাত্র এক অর্থনীতিবিদ হিসেবে নয়, বরং একজন মানুষ হিসেবে খুব ব্যক্তিগত।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে অনেক অগ্রগতি হয়েছে, বিশেষ করে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ে। তবে অমর্ত্য সেন মনে করেন, বর্তমানে দেশটির রাজনৈতিক পরিবেশ উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, জামাতের ভূমিকা ও সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয়ক প্রশ্নে তিনি সোজাসুজি তাদের সমালোচনা করেছেন। জামাতের কট্টর মৌলবাদী নীতির বিরুদ্ধে অমর্ত্য সেনের খোলামেলা মন্তব্যে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতা এবং গণতান্ত্রিক অঙ্গীকার নিয়ে যদি কেউ জোরালো বক্তব্য দিয়েছে, সেটা হচ্ছে মহম্মদ ইউনুস। তিনি আমার পুরোনো বন্ধু। আমি জানি, তাঁর ক্ষমতা রয়েছে। তিনি দেশটির বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম।’’ ইউনুসকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখার জন্য অমর্ত্য সেন তার সমর্থন জানিয়েছেন এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যত সম্পর্কে আশাবাদী। তবে দেশের পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হয়, তা হলে তিনি নিজেও উদ্বেগ প্রকাশ করবেন, এমন মন্তব্য করেছেন।

এদিকে, অমর্ত্য সেনের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছেন জামাতপন্থী রাজনৈতিক নেতারা। তাঁরা এই বিষয়ে পাল্টা আক্রমণ করে বলছেন, অমর্ত্য সেনের কথায় একপাক্ষিকতা রয়েছে। জামাত তাদের নিজস্ব মতাদর্শ অনুসারে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান রক্ষা করতে চায়। তবে, অমর্ত্য সেনের মনোভাব পরিষ্কার—ধর্মীয় মৌলবাদ ও সহিংসতা কোনোভাবেই বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, এবং তার জন্য যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

বাংলাদেশে বর্তমানে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে অমর্ত্য সেনের উদ্বেগ যথার্থ। হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, মন্দির ভাঙচুর, এবং রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে এমন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, যা দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও অস্থির করছে।

অমর্ত্য সেনের মতে, ‘‘বাংলাদেশ একটি বড় অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করেছে, তবে এর মধ্যে সমাজের নানান স্তরে আরও কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে, বিশেষত ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং মানবাধিকার রক্ষায়।’’ তাঁর এই বক্তব্য শুধু বাংলাদেশের বর্তমান চিত্রের বিশ্লেষণ নয়, এটি ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে ঠিকভাবে গড়ে তোলার জন্য একটি সতর্ক বার্তা।