অপারেশন সিঁদুরের মাঝেই বাংলাদেশে বড় ধাক্কা ভারতের

ছয়ই মে মাঝরাতের পর থেকে শুরু হয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর বহুল প্রতীক্ষিত “অপারেশন সিঁদুর” (Operation Sindoor)। এই অভিযান ছিল পাকিস্তান এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে…

India Deports 202 Illegal Bangladeshi Immigrants

ছয়ই মে মাঝরাতের পর থেকে শুরু হয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর বহুল প্রতীক্ষিত “অপারেশন সিঁদুর” (Operation Sindoor)। এই অভিযান ছিল পাকিস্তান এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে। এই অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার মাত্র একদিন পর, ৭ই মে রাতে বাংলাদেশে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। ফেরত পাঠানো হয়েছে ২০২ জন বাংলাদেশি নাগরিককে (Bangladeshi Immigrants), যারা অবৈধভাবে ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছিলেন এবং দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছিলেন।

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স) এই বাংলাদেশি নাগরিকদের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন সুন্দরবনের একটি নির্জন দ্বীপে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয়। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সূত্রে জানা গেছে, এই সমস্ত নাগরিক অবৈধভাবে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে প্রবেশ করে সেখানে বসবাস করছিলেন এবং কেউ কেউ ভারতীয় পরিচয়পত্রও তৈরি করে নিয়েছিলেন।

   

বিজিবির এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এক প্রেস কনফারেন্সে বলেন, “ভারতের বিএসএফ আমাদের জানিয়েছে যে মোট ২০২ জন বাংলাদেশি নাগরিককে তারা সীমান্তে পাঠিয়েছে। আমরা তদন্ত করে জেনেছি, তারা কয়েক বছর আগে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিল এবং দীর্ঘ সময় ধরে সেখানেই বসবাস করছিল। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি এবং কেন্দ্রের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা চলছে।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ঘটনাটি শুধু একটি সীমান্ত নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, বরং ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কেও একটি বার্তা বহন করে। অপরদিকে, অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়ে এভাবে আচরণ করায় মানবাধিকার সংগঠনগুলিও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।

ভারতে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছে। এনআরসি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস) এবং সিএএ (সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট) এর প্রেক্ষাপটে এই প্রসঙ্গ আরও বেশি করে উঠে আসে। সূত্র বলছে, যেসব নাগরিক ফেরত পাঠানো হয়েছে তারা মূলত মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত এবং দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রাজ্যে শ্রমিক, গৃহকর্মী, রিকশাচালক কিংবা নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন।

এ প্রসঙ্গে একজন বিশ্লেষক জানান, “ভারত সরকারের এই পদক্ষেপ একটি সুপরিকল্পিত অভ্যন্তরীণ নীতির অংশ। একদিকে যেমন দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বার্তাও দেওয়া হচ্ছে যে অনুপ্রবেশ বরদাস্ত করা হবে না।”

Advertisements

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে অভ্যন্তরীণভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফেরত আসা ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিস্তারিত খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এই ঘটনার ফলে সীমান্ত এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। তবে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চলছে।

এই মুহূর্তে “অপারেশন সিঁদুর” এবং বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠানো – এই দুই ঘটনাই দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।