বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের নতুন দিগন্ত, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন

বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী এবং গভীর করার জন্য একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং বাণিজ্যিক…

bangladesh-pakistan-new-horizon-trade-cultural-connection

বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী এবং গভীর করার জন্য একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কের বিস্তৃতি ঘটানোর প্রচেষ্টা চলছে। সোমবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছে যে, উভয় দেশ নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, যা ভবিষ্যতে সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, শীঘ্রই পাকিস্তানি নারী ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা আসবে তাদের পণ্য প্রদর্শন করতে। এই প্রদর্শনীটি ঢাকার অভিজাত গুলশান ক্লাবে অনুষ্ঠিত হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ” পাকিস্তানি সালোয়ার-কামিজ বাংলাদেশের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়।”

   

পাকিস্তান প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। অপরদিকে, বাংলাদেশ পাকিস্তানে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। এদিকে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য এক নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। “বাংলাদেশ-পাকিস্তান বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি পাবে, কারণ দুই দেশের মধ্যে একটি সরাসরি শিপিং লাইন চালু হতে যাচ্ছে,” বলেন ওই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সরকারিভাবে (GtoG) ৫০,০০০ টন চাল আমদানির একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এই চাল শীঘ্রই চট্টগ্রাম বন্দর পৌঁছাবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বিমান যোগাযোগও সম্প্রসারিত করার কাজ চলছে। বাংলাদেশ-পাকিস্তান রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালানোর জন্য ইতিমধ্যেই ফ্লাই জিন্নাহ এয়ারলাইন্সকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে, ফ্লাই জিন্নাহ এয়ারলাইন্সের কিছু বিমানের ঘাটতি রয়েছে, কিন্তু তারা নতুন বিমান কিনলে এই পরিষেবা চালু হবে।

এছাড়া, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ সফর করতে পারেন বলে সম্ভাবনা রয়েছে।

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ কায়রোতে অনুষ্ঠিত ১১তম ডি-৮ সামিটের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে দুই নেতা ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার, বাণিজ্য বৃদ্ধি, এবং আইটি, কেমিক্যাল, চামড়া, সার্জিক্যাল সামগ্রীসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেন।

শাহবাজ শরিফ এক টুইটে জানান, “আজ সকালে আমার বন্ধু প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে খুবই উষ্ণ এবং আন্তরিক আলোচনা হয়েছে। আমরা ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার, বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং আইটি, কেমিক্যাল, চামড়া, সার্জিক্যাল সামগ্রীসহ অন্যান্য খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেছি।” তিনি আরও বলেন, “আমরা মানুষের মাঝে সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং পারস্পরিক উন্নয়নের জন্য যৌথ প্রচেষ্টা চালানোর বিষয়ে সম্মত হয়েছি। আমরা আমাদের জনগণের জন্য সমৃদ্ধির দিকে আরও গভীর সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছি।”

বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর দুই দেশের সম্পর্ক অনেকটা অটুট ছিল। তবে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বারা ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গণহত্যার জন্য পাকিস্তান সরকারের কাছে বাংলাদেশ এখনও ক্ষমা প্রার্থনা দাবি করে আসছে। তবে, এই অমীমাংসিত বিষয় সত্ত্বেও, বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরায় জোরদার করতে উদ্যোগ নিয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত খুলতে পারে।