হিংসা আক্রান্ত বাংলাদেশি হিন্দুরা ভারত সীমান্তে আশ্রয় চেয়েছিল, কিন্তু ফিরিয়ে দেয় বিএসএফ: UN

নিউ ইয়র্ক: ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর ব্যাপক হামলা ও হিংসার ঘটনা ঘটেছে৷ রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার অফিসের একটি সত্য অনুসন্ধান মূলক প্রতিবেদনে…

Bangladesh Hindus sought safety at border, BSF sent them away

short-samachar

নিউ ইয়র্ক: ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর ব্যাপক হামলা ও হিংসার ঘটনা ঘটেছে৷ রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার অফিসের একটি সত্য অনুসন্ধান মূলক প্রতিবেদনে এই সহিংসতার ছবি ফুটে উঠেছে৷ যেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বাসস্থান লক্ষ্য করে আক্রমণ চালানো হয়েছে৷

   

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ঘটানো এসব হামলার শিকার হয়ে প্রায় ৪,০০০ হিন্দু নাগরিক ভারত সীমান্তের কাছে নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় নিতে গিয়েছিলেন, কিন্তু তাদেরকে বিএসএফ (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স) ফিরিয়ে দেয়। রাষ্ট্র সঙ্ঘের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূস এই হামলাগুলিকে ‘প্রচার’ বা কল্পনা বলে উড়িয়ে দিলেও, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে প্রতিবেদনটি এসেছে তা নির্ভরযোগ্য এবং বাস্তবভিত্তিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি।

হিংসার শিকার হিন্দুরা

রাষ্ট্র সঙ্ঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল। বিশেষত, ধর্মীয় সহিংসতার কারণে বহু হিন্দু তাদের বাড়ি-ঘর ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এমনকি, সহিংসতা থেকে বাঁচতে প্রায় ৩,০০০-৪,০০০ হিন্দু সীমান্তের কাছে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে বিএসএফ তাদেরকে ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে দেয়নি।

প্রতিবেদনটি আরও জানায়, “থাকুরগাঁওয়ে হিন্দু মন্দির ও শ্মশানঘাটের ওপর হামলা চালানো হয়, সেখানে অনেক ব্যবসা এবং বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর, ওই এলাকার প্রায় ৩,০০০-৪,০০০ হিন্দু মানুষ নিজেদের জীবন রক্ষা করতে সীমান্তের কাছে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তাদেরকে বিএসএফ ফেরত পাঠিয়ে দেয়।”

বিএসএফের ভূমিকা
এই সহিংসতার সময়, বাংলাদেশে শরণার্থী হয়ে আসা হিন্দুদের আশ্রয় নিতে দেওয়া হয়নি, এমন একাধিক ভিডিও এবং ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এসব ভিডিওতে দেখা যায়, বহু বাংলাদেশি নাগরিক সীমান্তের কাছে এসে ভিড় জমাচ্ছেন, কিন্তু বিএসএফ তাদের প্রবেশের অনুমতি দেয়নি। এক ভিডিওতে, বিএসএফের এক সদস্য বাংলাদেশি নাগরিকদের জানাচ্ছিলেন, তারা সীমান্ত পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারবেন না, এবং তাদেরকে ফিরে যেতে বলা হচ্ছিল।

১৯৭১ সালের তুলনা
এটি এমন একটি সময় যখন ১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল। সেই সময় ভারত সীমান্তে আসা হাজার হাজার শরণার্থীকে সাহায্য করেছিল। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি ভিন্ন। ২০২৪ সালের এই সহিংসতার পর, যখন হিন্দুরা নিরাপত্তা চেয়ে ভারতের সীমান্তে আসেন, তখন তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এটি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন এক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে, যেটি আন্তর্জাতিক মহলে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

রাষ্ট্র সঙ্ঘের প্রতিবেদনটি স্পষ্টভাবে বলছে, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ধর্মীয় সহিংসতা সংঘটিত হয়েছে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা যথাযথ ছিল না। বিএসএফের কার্যক্রম এবং বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই ঘটনার পেছনে থাকা নানা কারণ ও আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত ভারতীয় নীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন তুলে ধরছে।