গোপালগঞ্জে হিন্দু যুবকের উপর মৌলবাদী আক্রমণে নামল সেনা

bangladesh-gopalganj-hindu-youth-attack-army-intervenes

ঢাকা: বাংলাদেশে ধর্মীয় সহনশীলতা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠল। গোপালগঞ্জ জেলায় এক হিন্দু যুবকের উপর মিথ্যা ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে উগ্রপন্থীদের হামলার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একদল ইসলামপন্থী উন্মত্ত জনতা ওই যুবককে রাস্তায় টেনে এনে বেধড়ক মারধর করে। খবর পেয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আক্রান্ত যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল হলেও মানসিকভাবে তিনি ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছেন।

Advertisements

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত যুবকটি এলাকারই বাসিন্দা। একটি সামাজিক মাধ্যমের পোস্টকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ছড়ানো হয়। মুহূর্তের মধ্যেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গোপালগঞ্জ শহরের একাধিক এলাকায়। সন্ধ্যার কিছু পরেই প্রায় শতাধিক উগ্র জনতা যুবকের বাড়িতে হামলা চালায়, ভাঙচুর করা হয় পাশের দোকানপাটও।

খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে জনতা কিছুটা ছত্রভঙ্গ হলেও, এলাকাজুড়ে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা দ্রুত হস্তক্ষেপ করেছি। আক্রান্ত যুবক নিরাপদে আছে। দোষীদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে।”

এই ঘটনা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলির দাবি, গত কয়েক বছরে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হিন্দুদের উপর একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযোগগুলি ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে, কিন্তু ততক্ষণে নিরপরাধ মানুষদের প্রাণ হারাতে হয়েছে বা ঘরবাড়ি পুড়ে ছারখার হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গোপালগঞ্জের এই ঘটনাটি শুধু একটি বিচ্ছিন্ন আক্রমণ নয়—এটি বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। যেখানে ধর্মকে হাতিয়ার করে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা চালানো হচ্ছে এবং প্রশাসনকে বারবার কঠিন অবস্থায় পড়তে হচ্ছে।

Advertisements

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সমাজ বলছে, তারা ক্রমেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। একজন প্রবীণ নাগরিক বলেন, “আমরা এই দেশেই জন্মেছি, কিন্তু এখন নিজের ঘরে নিরাপদ বোধ করি না। একটা গুজব, একটা ফেসবুক পোস্টই এখন মৃত্যুর কারণ হয়ে যাচ্ছে।”

বাংলাদেশ সরকারের এক মন্ত্রী বলেন, “ধর্মের নামে সহিংসতা বরদাস্ত করা হবে না। সেনা ও পুলিশ তদন্ত করছে। দোষীরা কেউ রেহাই পাবে না।” তবে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির দাবি, সরকার সংখ্যালঘু সুরক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। তারা প্রশ্ন তুলেছে কেন প্রতিবারই এমন ঘটনায় প্রশাসন এত দেরিতে ব্যবস্থা নেয়?

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। একাধিক মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশ সরকারের কাছে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যতদিন না দেশে মিথ্যা ধর্ম অবমাননা অভিযোগে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়, ততদিন এই ধরনের উগ্রতার ঘটনা থামানো সম্ভব হবে না। গোপালগঞ্জের এই হামলা বাংলাদেশের সমাজে বিভাজনের গভীর ক্ষতকে আবারও সামনে এনে দিয়েছে।