পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করতে মরিয়া বাংলাদেশ

পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রী (Bangladesh) সেনেটর মোহাম্মদ ইসহাক দার এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের মধ্যে রাষ্ট্রসংঘ সদর দফতরে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।…

Bangladesh foreign policy

পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রী (Bangladesh) সেনেটর মোহাম্মদ ইসহাক দার এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের মধ্যে রাষ্ট্রসংঘ সদর দফতরে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত সোমবার (২৮ জুলাই) ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের লক্ষ্যে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ফাঁকে এই বৈঠক হয়।

২০২৪ সালের অক্টোবরের পর এটি দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের চতুর্থ বৈঠক। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বৈঠকে দুই নেতা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার করার পাশাপাশি ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি অটল সংহতি প্রকাশ করেছেন।

   

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিস্তৃত পর্যালোচনা করা হয়। দার এবং হোসেন পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং নিয়মিত উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তারা সংযোগ বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করেন, অদূর ভবিষ্যতে উচ্চপর্যায়ের সফরের পরিকল্পনার বিষয়েও একমত হন।

গাজায় চলতে থাকা রাজনৈতিক এবং সামরিক উত্তেজনা এবং ইসরাইলি সামরিক আগ্রাসন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামের প্রতি সমর্থন জানান এবং দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের ওপর ভিত্তি করে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সম্মেলন থেকে তাৎপর্যপূর্ণ ফলাফলের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।

২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ পাকিস্তানের সম্পর্ক উন্নতির পথে হাঁটতে শুরু করে। দক্ষিণ এশিয়ার দুই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক শত্রুতা সত্ত্বেও সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত হয়।

এই প্রেক্ষাপটে গত সপ্তাহে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নকভি ঢাকা সফর করেন এবং বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এই সফরে কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকারের এক ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

Advertisements

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং কূটনৈতিক সুবিধা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতি। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নকভিকে সম্মান গার্ড দিয়ে স্বাগত জানান এবং পাকিস্তানের পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণের সুযোগ প্রদানের প্রস্তাবের প্রশংসা করেন। এছাড়া, দুই দেশ পুলিশ একাডেমির মধ্যে বিনিময় কর্মসূচি চালু করতে সম্মত হয়েছে, এবং শীঘ্রই বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল পাকিস্তানের ন্যাশনাল পুলিশ অ্যাকাডেমি পরিদর্শন করবে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। তবে, বাংলাদেশে নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সম্পর্কের উন্নতি ঘটছে। গত নভেম্বরে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্য পুনরায় শুরু হয়, যখন করাচি থেকে চট্টগ্রামে একটি কনটেইনার জাহাজ যাত্রা করে।

যা কয়েক দশকের মধ্যে প্রথম সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য। এই উন্নতির প্রেক্ষাপটে ইসহাক দার এবং তৌহিদ হোসেনের সাম্প্রতিক বৈঠক দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতা আরও গভীর করার প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে।

৩২ হাজার কোটির সরকারি বন্ড নিলামের ঘোষণা RBI-এর

ফিলিস্তিন ইস্যুতে দুই নেতা একমত যে, গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন এবং মানবিক সংকট অগ্রহণযোগ্য। তারা ১৯৬৭-এর পূর্ববর্তী সীমানার ভিত্তিতে আল-কুদস আল-শারিফকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে জোরালো সমর্থন জানান। এই বৈঠক দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে, বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে, যেখানে পাকিস্তান পহেলগাঁও হামলার জন্য অভিযুক্ত হয়েছে।