Balochistan insurgency: একদিকে নিয়ন্ত্রণরেখায় পাকিস্তানের লাগাতার উসকানিমূলক কার্যকলাপ, অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরে দানা বাঁধছে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা। ভারতীয় সীমান্তে নিরীহ নাগরিকদের উপর গুলি বর্ষণ করে চলেছে পাকিস্তানি সেনা, আর একইসঙ্গে নিজেদের দেশেই বিদ্রোহে রক্তাক্ত হচ্ছে তারা। বালোচিস্তানে একের পর এক বিস্ফোরণ ও হামলায় কেঁপে উঠছে গোটা পাকিস্তান। শুধু সাধারণ জনগণ নয়, নিশানায় রয়েছে পাক সেনা ও গোয়েন্দা সংস্থার উচ্চপদস্থ আধিকারিকরাও।
সম্প্রতি বালোচিস্তানে ঘটে যাওয়া জোড়া বিস্ফোরণ পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন তুলেছে। বোলান জেলার শোরকান্ডে সেনা কনভয়ের উপর আইইডি বিস্ফোরণে প্রাণ হারান অন্তত ১২ জন সেনা আধিকারিক। তাদের মধ্যে ছিলেন স্পেশাল অপারেশন কমান্ডার তারিক ইমরান ও সুবেদার উমর ফারুকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিরা। সেনার গাড়িটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। একইদিনে কেছের কুলাগ তিগরানে আরও একটি বিস্ফোরণে নিহত হন বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডের দুই অফিসার।
এই সমস্ত হামলার দায় স্বীকার করেছে বালোচ লিবারেশন আর্মি (BLA)। সংগঠনের মুখপাত্র জেয়নাদ বালোচ এক বিবৃতিতে বলেন, “পাক সেনা এখন আর সেনাবাহিনী নয়, একদল সশস্ত্র গুণ্ডা। তারা বালোচদের জমি দখলের ষড়যন্ত্র করছে। সেই ষড়যন্ত্রের জবাব দিতেই আমাদের এই অভিযান। ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ হামলা হবে।”
বালোচ বিদ্রোহ নতুন নয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মের পর থেকেই বালোচিস্তান প্রদেশ আলাদা হওয়ার দাবি জানিয়ে এসেছে। খনিজে সমৃদ্ধ এই অঞ্চলটি নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত বলে মনে করে বালোচ জনগণ। ২০০০ সালের পর থেকে সংগঠিতভাবে বিদ্রোহে নামে বালোচ লিবারেশন আর্মি। ইসলামাবাদের অভিযোগ, এই বিদ্রোহে বিদেশি শক্তির মদত রয়েছে, যদিও BLA বারবার জানিয়েছে এটি তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের সংগ্রাম।
২০২৫ সালের মার্চ মাসে এই বিদ্রোহীরা জাফার এক্সপ্রেস ট্রেন হাইজ্যাক করে দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। প্রায় ৫০০ যাত্রীসহ এই ট্রেনটি কয়েক ঘণ্টার জন্য সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেয় বিদ্রোহীরা। তাদের দাবি ছিল, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। যদিও পাক সেনা অভিযান চালিয়ে পণবন্দিদের মুক্ত করে, বিদ্রোহীরা দাবি করে অন্তত ৫০ জন সেনাকে তারা হত্যা করেছে।
চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের (CPEC) মাধ্যমে বালোচিস্তানের সম্পদ ব্যবহার করে গোটা দেশকে এগিয়ে নিতে চায় ইসলামাবাদ, কিন্তু এর ফলে আরও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রা। জমি অধিগ্রহণ, নিপীড়ন, গুমখুন ও ধর্ষণের ঘটনা বালোচ জনগণের মধ্যে ক্ষোভকে বাড়িয়ে তুলেছে। তাই পরিস্থিতি ক্রমেই গৃহযুদ্ধের রূপ নিচ্ছে।
বর্তমানে পাকিস্তান এক ভয়ানক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে আন্তর্জাতিক সীমান্তে যুদ্ধের উত্তাপ, অন্যদিকে দেশের অন্দরে ভাঙনের সুর। সরকার ও সেনা একাধিক ফ্রন্টে যুদ্ধ লড়ছে — যার পরিণতি হতে পারে পাকিস্তানের জন্য চূড়ান্ত বিপর্যয়। আন্তর্জাতিক মহল গভীর উদ্বেগে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, কারণ এই অস্থিরতা শুধু পাকিস্তান নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে।