ফের অতর্কিতে বালুচ হামলায় নিহত ৫ পাক সেনাকর্মী

baloch-militant-attack-kills-five-pakistani-soldiers-in-balochistan

কোয়েটা: পাকিস্তানের অশান্ত দক্ষিণাঞ্চলীয় বেলুচস্তান প্রদেশ আবারও রক্তাক্ত। কেচ জেলার ম্যান্ড এলাকায় বেলুচ যোদ্ধাদের একটি নতুন অ্যাম্বুশে কমপক্ষে পাঁচজন পাকিস্তান ফ্রন্টিয়ার কর্পস (এফসি) সৈনিক নিহত হয়েছে। সকালের এই হঠাৎ আক্রমণে এফসির একটি যানবাহনকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়, যাতে যানের ভেতরের সবাই মারা যায় বলে স্থানীয় সূত্র জানাচ্ছে।

Advertisements

ঘটনাস্থলে পৌঁছানো সামরিক হেলিকপ্টারগুলো মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে গেছে, কিন্তু এখনও আহতদের সংখ্যা বা অন্য কোনো ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ পায়নি। বেলুচ লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ) এই আক্রমণের দায় স্বীকার করেছে, বলছে এটি পাকিস্তানি বাহিনীর উপর প্রতিশোধমূলক হামলা।বেলুচস্তানের এই অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরে বিদ্রোহের আগুনে জ্বলছে।

দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনের কাছে অগ্নিকাণ্ড, ঘটনাস্থলে পৌঁছাল দমকলোর পাঁচটি ইঞ্জিন

কেচ জেলা, যা ইরান সীমান্তের কাছে অবস্থিত, এখানে বেলুচ জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলোর সক্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। ম্যান্ড এলাকা একটি সংবেদনশীল স্থান—এখানে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপেক) প্রকল্পের সুরক্ষা জন্য এফসির চেকপয়েন্ট এবং প্যাট্রোলিং বাড়ানো হয়েছে।

বিএলএফ-এর স্পোকসপার্সন মেজর গোয়াহরাম বেলুচ এক বিবৃতিতে বলেন, “আমাদের সার্মাচাররা (স্বাধীনতা যোদ্ধা) এই অকুপাইড বেলুচস্তান থেকে পাকিস্তানি বাহিনীকে তাড়িয়ে দেওয়ার লড়াই চালিয়ে যাবে।

এই আক্রমণটি তাদের অত্যাচারের জবাব।” তারা দাবি করছে, আক্রমণে ব্যবহৃত অস্ত্রের মধ্যে ছিল স্নাইপার রাইফেল এবং হ্যান্ড গ্রেনেড, যা প্রমান করে যে বিদ্রোহীরা ক্রমশ সুসংগঠিত হয়ে উঠছে। এই ঘটনা বেলুচস্তানের চলমান বিদ্রোহের সর্বশেষ অধ্যায়। এই বছরের শুরু থেকে এখানে বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণ বেড়েছেজানুয়ারিতে কেচের সাবদান এলাকায় এক চেকপোস্টে হামলায় ১০ জন সুরক্ষা কর্মী নিহত হয়।

Advertisements

এপ্রিলে মাস্তুঙ্গে রোডসাইড বোমায় তিনজন মারা যান, আর কোয়েটার মার্গাতে আইইড হামলায় ১০ জন সৈনিকের মৃত্যু হয়। মে মাসে বিএলএ-র দাবিতে কেচের জামুরানে চারটি আক্রমণে একাধিক সৈন্য নিহত হয়। এই সব হামলা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে চাপের মুখে ফেলেছে, বিশেষ করে সিপেক প্রকল্পের সুরক্ষায়। চীনা কোম্পানিগুলোর কর্মীদের লক্ষ্য করে আক্রমণ হয়েছে, যা বেলুচরা ‘জাতীয় সম্পদের লুটতর’ বলে অভিহিত করে।

ফেব্রুয়ারিতে ম্যাচ শহরে একটি বড় আক্রমণে দুই পক্ষের কয়েক ডজন লোক মারা যায়।বেলুচ বিদ্রোহের মূলে রয়েছে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ। বেলুচস্তান পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ, যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডার আছে তামা, জিঙ্ক, গ্যাস এবং সোনা। কিন্তু স্থানীয় বেলুচ জনগোষ্ঠী দাবি করে, এই সম্পদের লাভের বিনিময়ে তারা পায় শুধু দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং দমন।

২০০০-এর দশক থেকে বিদ্রোহ পুনরুজ্জীবিত হয়েছে, বিশেষ করে সিপেক প্রকল্পের পর। বিএলএ, বিএলএফ এবং অন্যান্য গোষ্ঠী বলে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং এফসি জোর করে জমি দখল করে চীনা প্রকল্প চালু করছে, যাতে স্থানীয়রা বঞ্চিত।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানায়, এফসির অভিযানে হাজারো বেলুচ নিরুদ্দিষ্ট হয়েছে বা নির্যাতিত। পাকিস্তান সরকার এসবকে ‘সন্ত্রাসবাদ’ বলে চিহ্নিত করে, এবং অভিযান বাড়িয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দমনমূলক নীতি বিদ্রোহকে আরও উস্কে দিচ্ছে।