HomeWorldবোরখা নিষিদ্ধ করার দাবিতে বোরখা পরেই প্রতিবাদে সাংসদ

বোরখা নিষিদ্ধ করার দাবিতে বোরখা পরেই প্রতিবাদে সাংসদ

- Advertisement -

অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিতে তীব্র বিতর্ক তৈরি করেছে এক নজিরবিহীন ঘটনা। বোরখা নিষিদ্ধ (Australia Burqa Ban) করার দাবি দীর্ঘদিন ধরেই তুলে আসছিলেন সেনেটর পলিন হ্যানসন। কিন্তু সেই দাবিকেই আরও জোরালো করতে তিনি যে কৌশল বেছে নিলেন, তা যেন পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। সম্পূর্ণ মুখঢাকা বোরখা পরে গত সপ্তাহে তিনি প্রবেশ করেন অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট চেম্বারে। মুহূর্তের মধ্যেই সারা দেশের সংবাদমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় তার এই অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ।

হ্যানসনের দাবি, বোরখা শুধুমাত্র ধর্মীয় পরিচয়ের বাহক নয়, এটি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি “গুরুতর ঝুঁকি।” তিনি বলেন, “যখন পুরো শরীর ও মুখ ঢাকা থাকে, তখন ব্যক্তি-পরিচয় যাচাই করা কঠিন হয়। সন্ত্রাসবাদী অঞ্চলে বোরখার অপব্যবহারের বহু উদাহরণ রয়েছে।” তার বক্তব্য—এটি নারীর স্বাধীনতা নয়, বরং একটি “দমনের প্রতীক।”

   

কিন্তু তার এই প্রতিবাদী স্টান্টকে ‘অসম্মানজনক’ ও ‘উস্কানিমূলক’ বলে আখ্যা দিয়েছে পার্লামেন্টের বিরোধী দলগুলো। মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা মন্তব্য করেছেন, এটি দেশের বহুত্ববাদ ও ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি অশ্রদ্ধার প্রকাশ। বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। অনেকেই জানান—হ্যানসনের এই কাজ মুসলিম নারীদের উদ্দেশ্য করে অপমানমূলক ইঙ্গিত বহন করে।

তীব্র রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়ে সংসদ হ্যানসনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সাত দিনের জন্য তাকে পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশে নিষিদ্ধ করা হয়। বিরোধীরা বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে তার এমন আচরণ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করেছে।

তবে সমালোচনার মুখেও নিজের অবস্থান থেকে একচুলও সরেননি পলিন হ্যানসন। তিনি বলেন, “আমার প্রতিবাদ ছিল শান্তিপূর্ণ, প্রতীকী। যদি সরকার বোরখা নিষিদ্ধ না করে, তাহলে আমি এই বিষয়ে কথা বলতে থাকব। নিরাপত্তা কারও ধর্মের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি আরও দাবি করেন, বোরখা ইসলাম ধর্মের বাধ্যতামূলক অংশ নয়, বরং এটি একটি সামাজিক চাপ, যা নারীদের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করে।

এ ঘটনায় দর্শক ও নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া বিভক্ত। অনেকেই মনে করেন, বোরখা নিরাপত্তা ইস্যু—রাজনৈতিক বা ধর্মীয় বিতর্ক নয়। তাদের মতে, বিমানবন্দর, সরকারি ভবন বা উচ্চ নিরাপত্তা এলাকায় মুখঢাকা পোশাক নিষিদ্ধ করা যুক্তিযুক্ত। তবে অন্য পক্ষের দাবি—এই পদক্ষেপ মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বৈষম্য তৈরি করবে এবং ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে।

অস্ট্রেলিয়ার বামপন্থী দলগুলো এই ঘটনাকে “চরম ডানপন্থী উসকানি” বলে মন্তব্য করেছে। তারা জানায়, পোশাকের স্বাধীনতা মৌলিক অধিকার, এবং এটি কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। অপরদিকে, কিছু মানবাধিকারকর্মী জানান, বিষয়টি ধর্মীয় স্বাধীনতার সাথে যতটা যুক্ত, তার থেকেও বেশি যুক্ত নারীর স্বাধিকার নিয়ে বৈশ্বিক বিতর্কের সঙ্গে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হ্যানসনের এই পদক্ষেপ যদিও বিতর্কিত, তবে এটি অস্ট্রেলিয়ায় পোশাক, ধর্ম, নিরাপত্তা ও নারীর অধিকার—এই চারটি গুরুতর প্রশ্নকে জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রে এনে দিয়েছে।

বিতর্ক থামার কোনো লক্ষণ নেই। বরং, হ্যানসনের এই বোরখা-পরিহিত প্রতিবাদ নিঃসন্দেহে আগামী নির্বাচনের রাজনৈতিক হাওয়ায় বড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছে বিশ্লেষক মহল।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular