প্যারিস, ১০ সেপ্টেম্বর : নেপালের পর এবার ফ্রান্সে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ (Anti Government Protests) তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস সহ দেশের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে এসেছে, যার ফলে ব্যাপক আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বায়রোর সরকারের পতনের পর এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
এই উত্তেজনার পেছনে রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট, ক্রমবর্ধমান ঋণ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা। সামাজিক মাধ্যমে (সবকিছু বন্ধ করো) স্লোগানটি ভাইরাল হয়েছে, যা বিক্ষোভের তীব্রতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাইরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছে, গাড়িতে আগুন ধরিয়েছে এবং সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করেছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, প্যারিসের রাস্তায় আগুন জ্বলছে এবং বিক্ষোভকারীরা পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে। এই বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছে একটি প্রো-সার্বভৌমত্ববাদী টেলিগ্রাম গ্রুপ থেকে, যা পরে টিকটক, এক্স এবং ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
বামপন্থী গোষ্ঠীগুলো এই আন্দোলনকে সমর্থন করছে, যার ফলে এটি আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।ফ্রান্সে এই ধরনের বিক্ষোভ নতুন নয়। ২০২৩ সালে ১৭ বছর বয়সী নাহেল মেরজুক নামে এক কিশোরের পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর পর দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ও দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল।
সেই সময় হাজার হাজার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং প্রায় ৩,০০০টি আগুনের ঘটনা ঘটেছিল। পুলিশের উপর নস্লভিত্তিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছিল, যা বিক্ষোভকে আরও উত্তপ্ত করেছিল। এছাড়া, ২০২৩ সালে পেনশন সংস্কারের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমেছিল। প্যারিসে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৮০ জন গ্রেফতার হয়েছিল এবং বোর্দো টাউন হলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
বর্তমান বিক্ষোভে অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক সংকট প্রধান ভূমিকা পালন করছে। ফ্রান্সের ক্রমবর্ধমান ঋণ এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা নিয়ে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি জনগণের সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হয়েছেন।
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সে আসন্ন নির্বাচনের পটভূমিতে এই বিক্ষোভ রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ম্যাক্রোঁর জনপ্রিয়তা এই বিক্ষোভের কারণে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।নেপালে সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে, যা ভারত-নেপাল সীমান্তেও প্রভাব ফেলেছে।
কাঠমান্ডুতে বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে এবং সরকারি কার্যালয়ে ভাঙচুর করেছে। ফ্রান্সের বর্তমান বিক্ষোভের সঙ্গে নেপালের এই ঘটনার সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যেখানে সরকারি নীতির বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভ রাস্তায় প্রকাশ পাচ্ছে।
ফ্রান্সে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে, এবং পুলিশ আন্সু গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করছে। প্যারিসের রাস্তায় যুদ্ধক্ষেত্রের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবন, দোকান এবং গাড়িতে আগুন ধরিয়েছে। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন এবং শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ফ্রান্সে বিক্ষোভের ইতিহাস দীর্ঘ। ২০১৮-১৯ সালের ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলন থেকে শুরু করে ২০২০ সালে নতুন নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, ফ্রান্সে জনগণের ক্ষোভ প্রায়ই রাস্তায় প্রকাশ পায়। ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনের সময় প্যারিসের পর্যটন স্থান এবং স্মৃতিসৌধে ভাঙচুর করা হয়েছিল। বর্তমান বিক্ষোভেও একই ধরনের তীব্রতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যেখানে বামপন্থী এবং অতি-বামপন্থী গোষ্ঠীগুলো আন্দোলনকে উসকে দিচ্ছে।
উৎসবে সোনালি চমক ! MPJ জুয়েলার্সের শোরুম শুভারম্ভে অভিনেত্রী শুভশ্রী
ফ্রান্সের সরকার এই বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের বিভিন্ন শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং হাজার হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে, বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ থামানোর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সামাজিক মাধ্যমে এই বিক্ষোভের সমর্থনে নতুন হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করছে, যা আন্দোলনকে আরও জোরদার করছে।
এই ঘটনা ফ্রান্সের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের গভীরতা তুলে ধরছে। আগামী দিনে এই বিক্ষোভ কীভাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করে, তা নিয়ে সবার দৃষ্টি এখন প্যারিসের দিকে।