ভারতের পর এবার আফগানিস্তান৷ পাকিস্তানের সঙ্গে শুরু জলযুদ্ধ৷ তালিবান শাসিত আফগানিস্তান পাকিস্তানের দিকে জল প্রবাহ সীমিত করতে চলেছে। আফগান তথ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, কুনার নদীতে “যত দ্রুত সম্ভব” বাঁধ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন তালিবানের সর্বোচ্চ নেতা মৌলবী হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা।
কুনার নদীতে বাঁধ নির্মাণ শুরু হবে
আফগান জল ও বিদ্যুৎ মন্ত্রক জানিয়েছে, সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশক্রমে তারা কুনার নদীতে বাঁধ নির্মাণ শুরু করবে এবং এ কাজে দেশীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করবে, বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর নির্ভর করবে না। লন্ডন-ভিত্তিক আফগান সাংবাদিক সামি ইউসুফজাই বলেন, “ভারতের পর, আফগানিস্তানও পাকিস্তানের জল সরবরাহ সীমিত করার পথে এগোতে পারে।”
কুনার নদী ও কাবুল নদীর ভৌগলিক গুরুত্ব
৪৮০ কিমি দৈর্ঘ্যের কুনার নদী হিন্দুকুশ পর্বতমালার উত্তরে, ব্রোগিল পাসের নিকটে উৎপন্ন হয়ে কুনার ও নগরহার প্রদেশের মধ্য দিয়ে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়। পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে প্রবেশ করার পর এটি কাবুল নদীর সঙ্গে মিলিত হয়। পাকিস্তানে এটি চিত্রাল নদী নামে পরিচিত।
কাবুল নদী আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের মধ্যে সবচেয়ে বড় ট্রান্সবাউন্ডারি নদী, যা পাকিস্তানের বিশেষত খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সেচ ও জল চাহিদার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কুনার নদীর জলপ্রবাহ কমলে ইন্দাস নদীর জল পরিমাণও প্রভাবিত হবে, যা পাঞ্জাবের জন্যও সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
তালিবানের জলসত্ত্ব্ব নীতি ও প্রেক্ষাপট
২০২১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তালিবান আফগানিস্তানের জলসত্ত্ব্ব নিশ্চিতকরণে জোর দিচ্ছে। দেশীয় নদী ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে বাঁধ নির্মাণ ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ত্বরান্বিত করা হয়েছে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনো আধিকারিক দ্বিপাক্ষিক জলবণ্টন চুক্তি নেই। পাকিস্তান ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছে, এই একতরফা পদক্ষেপ আঞ্চলিক জল সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
ভারত–আফগানিস্তান যৌথ হাইড্রোপাওয়ার উদ্যোগ
এই পদক্ষেপ আসে ভারতের পরিদর্শনের এক সপ্তাহের মধ্যে, যখন আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওলভী আমীর খান মুত্তাকি ভারত সফরে এসেছিলেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন। দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতের সহায়তায় নির্মিত সালমা বা আফগান-ভারত ফ্রেন্ডশিপ ড্যাম ও অন্যান্য জলবিদ্যুৎ প্রকল্প আফগানিস্তানের শক্তি ও কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
সালমা বাঁধ (২০১৬ সালে সম্পন্ন) ৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে এবং ৭৫,০০০ হেক্টর জমি সেচে সক্ষম। ২০২১ সালে ভারতের ২৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে শাহতুত বাঁধের মাধ্যমে কাবুল নদীর একটি শাখায় ১৪৭ মিলিয়ন কিউবিক মিটার জল সংরক্ষণ করা হবে, যা দুই মিলিয়নেরও বেশি কাবুলবাসীকে পরিচ্ছন্ন জল সরবরাহ করবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আফগানিস্তানের এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের জন্য নতুন জল সংকট সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষত খাইবার পাখতুনখোয়া ও পাঞ্জাব প্রদেশে।


