আফগানিস্তান: আফগানিস্তানে (Afghanistan) ফের ভয়াবহ ভূমিকম্প। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ-পূর্ব আফগানিস্তানে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে বলে জানিয়েছে জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সেস (GFZ)। সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মাটির মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে। প্রাথমিকভাবে কোনও ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণহানির খবর না পাওয়া গেলেও, এই কম গভীরতার ভূমিকম্পে বড় ধরনের বিপর্যয় আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই ভূমিকম্পটি ঘটেছে মাত্র চার দিন আগে আফগানিস্তানে সংঘটিত আরও একটি ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর। রবিবার স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪০ মিনিট নাগাদ ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্প আফগানিস্তানের কুনার ও নানগারহার প্রদেশে তীব্র ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। সে সময় সরকারি হিসেব অনুযায়ী কমপক্ষে ২,২০০ জন প্রাণ হারান এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হন। ইতিমধ্যেই বহু গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানা গিয়েছে। উদ্ধারকাজ এখনও চলমান রয়েছে।
আফগানিস্তান বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। দেশটির উত্তর ও পূর্ব অংশ বিশেষ করে সক্রিয় ভূকম্পন অঞ্চলের ওপর অবস্থিত হওয়ায় প্রায়ই ভূমিকম্প হয়। সাম্প্রতিক এই দুটি ভূমিকম্পে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। বৃহস্পতিবারের ভূমিকম্পে প্রাথমিকভাবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর না এলেও স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, বহু জায়গায় ভবন কেঁপে ওঠায় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে।
জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা ইতিমধ্যেই আফগানিস্তানের কুনার ও নানগারহার প্রদেশে উদ্ধারকাজ শুরু করেছে। রবিবার রাতের ভূমিকম্পে আক্রান্ত এলাকায় বিপুলসংখ্যক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। তাঁরা এখন খোলা আকাশের নিচে বা অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। স্বাস্থ্য পরিষেবার সংকট তৈরি হয়েছে, এবং প্রাথমিক চিকিৎসা ও খাদ্যসামগ্রীর অভাব দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জরুরি সাহায্যের আহ্বান জানিয়েছে আফগানিস্তান।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবারের নতুন ভূমিকম্প আরও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে উদ্ধারকর্মীদের। আফগানিস্তানের দুর্বল অবকাঠামো, পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী ও চিকিৎসা সুবিধার অভাব এবং চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের বিপর্যয় মোকাবিলা প্রচেষ্টাকে আরও জটিল করে তুলেছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ইতিমধ্যেই সহায়তার প্রতিশ্রুতি এসেছে। জাতিসংঘের মানবিক সাহায্য সংস্থা (OCHA) জানিয়েছে, তারা আফগানিস্তানে আক্রান্ত এলাকাগুলিতে দ্রুত ও কার্যকরভাবে সাহায্য পৌঁছে দিতে স্থানীয় সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় করছে। তবে অব্যাহত ভূমিকম্পের কারণে উদ্ধারকাজ ও সাহায্য বিতরণে ব্যাঘাত ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আফগানিস্তানে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বহুদিন ধরেই বিদ্যমান। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত, যা ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল। সাম্প্রতিক এই কম গভীরতার ভূমিকম্পগুলি ক্ষয়ক্ষতি বাড়ানোর অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
মানুষের প্রাণহানি কমাতে ও বিপর্যয় মোকাবিলার প্রস্তুতি বাড়াতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।