কাবুল: আফগানিস্তানের (Afghanistan Earthquake) পূর্বাঞ্চলে সোমবার গভীর রাতে আঘাত হানল এক শক্তিশালী ভূমিকম্প, যাতে অন্তত ৮০০ জন নিহত এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। আফগানিস্তানের কুনার (Kunar) প্রদেশে সর্বাধিক প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে, পাশাপাশি নাঙ্গারহার (Nangarhar) প্রদেশে অন্তত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আফগান সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রী শরাফত জামান (Sharafat Zaman) জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে কারণ দুর্গম পার্বত্য এলাকা হওয়ায় উদ্ধারকারী দলগুলির কাজ কঠিন হয়ে পড়েছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (US Geological Survey) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়েছিল জালালাবাদের (Jalalabad) প্রায় ২৭ কিমি পূর্ব-উত্তরপূর্বে, স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে (১৯১৭ GMT)। ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী এবং এর গভীরতা ছিল মাত্র ৮-১০ কিমি, যা এর ধ্বংসযজ্ঞকে আরও বাড়িয়ে তোলে। ভূমিকম্পের পর অন্তত তিনটি আফটারশকের (Aftershock) খবর পাওয়া গেছে।
কুনার প্রদেশের তথ্য কর্মকর্তা নাজিবুল্লাহ হানিফ (Najibullah Hanif) জানিয়েছেন, শত শত আহত ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পার্বত্য এলাকাগুলিতে কাঁচা মাটির ও পাথরের ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ায় হতাহতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
ভূমিকম্পের প্রভাব শুধু আফগানিস্তানেই সীমাবদ্ধ ছিল না; পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া (Khyber Pakhtunkhwa) প্রদেশেও ভূকম্পনের তীব্রতা অনুভূত হয়। রাজধানী ইসলামাবাদেও প্রায় ৩৭০ কিমি দূরে ভবনগুলো কেঁপে ওঠে। জালালাবাদসহ আফগানিস্তানের বহু শহরের মানুষ আতঙ্কে রাত কাটান। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ধসে পড়া ঘরবাড়ির নিচে বহু শিশু মারা গেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও শোকাবহ করে তুলেছে।
আফগানিস্তান ভূমিকম্পপ্রবণ একটি দেশ, যেখানে জনসংখ্যার বড় অংশই ভঙ্গুর ঘরে বসবাস করেন। দেশটি ইউরেশীয় ও ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় প্রায়ই এখানে ভূমিকম্প আঘাত হানে, বিশেষত হিন্দুকুশ (Hindu Kush) পার্বত্য অঞ্চলে। সাম্প্রতিক এই বিপর্যয় আফগানিস্তানের পুনর্গঠন প্রচেষ্টাকে আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে, কারণ দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত এবং দারিদ্র্য দেশের অবকাঠামোকে দুর্বল করে রেখেছে।
নাঙ্গারহার প্রদেশের যোগাযোগ কর্মকর্তা সেদিকুল্লাহ কুরাইশি বাদলুন (Sediqullah Quraishi Badloon) জানিয়েছেন, “কুনারে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে। নাঙ্গারহারে নয়জন নিহত হয়েছেন। মৃত ও আহতের সঠিক সংখ্যা এখনও নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়, কারণ বহু এলাকা দুর্গম।” তিনি আরও জানান যে, উদ্ধারকাজের জন্য স্থানীয় প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী ও স্বাস্থ্যকর্মীরা একসঙ্গে কাজ করছেন।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলিকেও উদ্ধারকাজে যুক্ত করা হয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলে সড়কপথ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে মানুষ উদ্ধার করতে স্থানীয় গ্রামবাসীরাও প্রশাসনকে সহায়তা করছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আফগানিস্তানে প্রতি বছর বড় আকারের ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মূল কারণ হল দুর্বল অবকাঠামো, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী এবং পর্যাপ্ত দুর্যোগ প্রস্তুতির অভাব। এই বিপর্যয় আবারও প্রমাণ করল যে দেশটিকে ভূমিকম্প মোকাবিলার জন্য জরুরি ভিত্তিতে পুনর্গঠনের পদক্ষেপ নিতে হবে।