ভারত-আফগানিস্তান সম্পর্ক (India Afghanistan relations) নতুন এক দিক নির্দেশনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক বার্তায় জানান, আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মৌলভি আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে তার ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল কাশ্মীরের পাহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা এবং ভারত-আফগানিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক।
জয়শঙ্কর লিখেছেন, “আজ সন্ধ্যায় আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মৌলভি আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে ভালো আলোচনা হয়েছে। পাহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানানোর জন্য তাকে ধন্যবাদ। ভারত-আফগানিস্তান সম্পর্কের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরির যে ভিত্তিহীন ও মিথ্যা প্রচেষ্টা চলছে, সেটি তিনি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আফগান জনগণের সঙ্গে আমাদের ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব ও তাদের উন্নয়নের জন্য আমাদের অব্যাহত সহায়তার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছি। ভবিষ্যতে সহযোগিতা আরও এগিয়ে নেওয়ার পথ নিয়েও আলোচনা হয়েছে।”
এই বিবৃতিতে ভারত যেমন খুশি হয়েছে, তেমনি চাপে পড়েছে পাকিস্তান। আফগানিস্তানের বর্তমান তালেবান নেতৃত্বের সঙ্গে পাকিস্তানের ঐতিহাসিক সম্পর্ক থাকলেও, দিন দিন এই সম্পর্কের ভিত নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের এই সদিচ্ছা এবং পারস্পরিক সম্মানজনক সম্পর্ক পাকিস্তানের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আফগানিস্তানের এই অবস্থান কূটনৈতিকভাবে একটি বড় বার্তা বহন করছে। একদিকে আফগানিস্তান পাকিস্তানকে তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সীমান্ত সমস্যার জন্য দায়ী করে আসছে, অন্যদিকে ভারতকে তারা আস্থার যোগ্য বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করছে। তালেবান সরকার প্রথম থেকেই ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক সম্পর্ক উন্নত করতে আগ্রহ দেখিয়ে এসেছে।
এদিকে, কাশ্মীরের পাহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী না করলেও, বিভিন্ন সূত্রে পাকিস্তানের মদদপুষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর সম্পৃক্ততা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে আফগানিস্তানের তরফ থেকে ওই হামলার তীব্র নিন্দা এবং ভারতের পাশে দাঁড়ানো পাকিস্তানের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে।
তালেবান সরকারের এই অবস্থান শুধু কূটনৈতিক নয়, বরং ভৌগোলিক ও আঞ্চলিক রাজনীতিরও ইঙ্গিত বহন করে। পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকায় তালেবানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের বিরোধ দীর্ঘদিনের। এই বিরোধ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, যখন আফগানিস্তান একাধিকবার পাকিস্তানের সীমান্ত লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়েছে।
ভারত-আফগানিস্তান সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই সংস্কৃতি, শিক্ষা ও উন্নয়নের দিক থেকে ঘনিষ্ঠ। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর অনেকেই ভেবেছিলেন এই সম্পর্ক হয়তো দুর্বল হয়ে পড়বে, কিন্তু ভারতের ধৈর্যশীল কূটনীতি এবং আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বাস্তবতা ভিন্ন চিত্র উপস্থাপন করেছে। ভারতের সাহায্যে তৈরি হওয়া আফগান সংসদ ভবন, সড়ক ও হাসপাতালগুলোর দৃষ্টান্ত এখনো আফগান জনজীবনে গুরুত্ব বহন করে।
সব মিলিয়ে, ভারতের পাশে আফগানিস্তানের অবস্থান শুধু পাকিস্তানের জন্য নয়, বরং গোটা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির জন্য একটি নতুন বার্তা। এই ঘটনাপ্রবাহ ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের কূটনৈতিক সমীকরণে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।