বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারত আজ এক অনড় অবস্থান নিয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের মদতে চলা সন্ত্রাসবাদকে আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে ভারত সরকার এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্র ৭টি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল গঠন করেছে, যারা বিশ্বের ৩৩টি দেশে গিয়ে পাকিস্তানের দ্বিচারিতা এবং সন্ত্রাসবাদে তার প্রত্যক্ষ মদত তুলে ধরবেন। এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মহলে ভারতীয় কূটনীতির এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা বলেই মনে করা হচ্ছে।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যেই দিল্লির দূতেরা রাশিয়া এবং জাপানে পৌঁছেছেন। জাপানের রাজধানী টোকিওতে একটি আলোচনাসভায় অংশ নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরব হন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। তিনি বলেন, “সন্ত্রাস পাগলা কুকুর। আর পাকিস্তান তার লালন পালন করছে।” এই মন্তব্যেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। তাঁর এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় অভিযোগকে আরও দৃঢ়তা দিয়েছে।
পাকিস্তানের দ্বিচারিতা ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে মুখোশ উন্মোচন
ভারতের অভিযোগ, একদিকে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার কথা বলছে, অন্যদিকে নিজেই সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। বিশেষ করে কাশ্মীর উপত্যকায় জঙ্গি অনুপ্রবেশ এবং সীমান্তে বারবার সংঘর্ষ বিরতির চুক্তি লঙ্ঘনের ঘটনা তার প্রমাণ। আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থা ও রাষ্ট্রপুঞ্জের একাধিক রিপোর্টে ইতিমধ্যে পাকিস্তানে মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির নাম উঠে এসেছে—তালিবান, জইশ-ই-মহম্মদ, লস্কর-ই-তইবা প্রভৃতি।
ভারত এই সমস্ত তথ্যের ভিত্তিতে একটি সুসংহত কূটনৈতিক প্রচার শুরু করেছে। সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল গঠনের মূল উদ্দেশ্যই হল—এই প্রচারকে রাজনৈতিক রঙ না দিয়ে সর্বসম্মতির ভিত্তিতে বিশ্বের সামনে পাকিস্তানের মুখোশ খুলে ধরা।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের তাৎপর্য
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রতিনিধি দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে টোকিওতে ভারতের অবস্থান তুলে ধরেন। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ, কাশ্মীর ইস্যুতে তার ভূমিকা এবং ভারতীয় সেনা ও সাধারণ নাগরিকদের উপর হামলার ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা। তাঁর মতে, পাকিস্তান শুধু ভারতের নয়, সমগ্র মানবতার শত্রু। বিশ্বজুড়ে শান্তি বজায় রাখতে হলে পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ফেলতেই হবে।
এই মন্তব্যে যেমন ছিল কড়া রাজনৈতিক বার্তা, তেমনই ছিল মানবিক আবেদন। পাকিস্তানের মতো দেশগুলিকে একঘরে করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জরুরি—এই বার্তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন তিনি।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ভারতের এই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ইতিমধ্যেই কিছু আন্তর্জাতিক মহলের প্রশংসা পেয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা এবং জাপানের কিছু রাজনৈতিক মহল ভারতের উদ্বেগকে যৌক্তিক বলে স্বীকার করেছে। তবে পাকিস্তানের বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত কিছু দেশ এই ইস্যুতে এখনও নীরব।
তবে ভারত থেমে নেই। আগামী সপ্তাহগুলোতে এই সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল আরও কয়েকটি দেশে সফর করবে। তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট—সন্ত্রাসবাদকে বিশ্বমঞ্চে বিচ্ছিন্ন করা এবং পাকিস্তানের মুখোশ চিরতরে খুলে দেওয়া।
এই উদ্যোগ প্রমাণ করে, আজকের ভারত শুধু প্রতিরক্ষা নয়, কূটনীতিতেও শক্তিশালী এবং সজাগ। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতা যখন সরাসরি আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, তখন গোটা দেশ একত্র হয়ে এই লড়াইয়ে শামিল হয়। বিশ্ব এখন দেখছে—সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই কতটা যুক্তিযুক্ত, মানবিক এবং প্রয়োজনীয়।