বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটিতে ভারতের শিল্পী এ আর রাহমানের সুর নিয়ে বিতর্ক প্রবল। এতে উত্তাল বাংলাদেশও। গানটির সম্পূর্ণ ‘বিকৃতি’ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের শিল্পীরা। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চাইল কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার। উল্লেখ্য, পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি মর্যাদা দিয়ে কলকাতা থেকে ঢাকায় নিয়ে গেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কবির শেষ জীবন ঢাকায় কেটেছিল।
নজরুলের গান বিকৃতি নিয়ে ঢাকায় কবির নাতনি মিষ্টি কাজী বলেন, ‘আমি পরিবারের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানাই। যেন একটি কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হয় এ ব্যাপারে। আমি নজরুল ইসলামের নাতনি হিসেবে পরিবারের তরফ থেকে বলছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা আমাদের জাতীয় কবির গান। তিনি শুধু বাংলার নন, সারা বিশ্বের একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি। তাঁর জন্য আপনারা এগিয়ে এলে আমরা কৃতজ্ঞ থাকব। এখন আমাদের প্রতিবাদ করার সময়। তাঁর গান কেন বিকৃত করা হলো? তাঁকে কে অনুমতি দিয়েছে? এ আর রাহমানের জানার দরকার ছিল যে, তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি। আমার দাদু কাজী নজরুল ইসলামকে আমি অপমানিত হতে দেব না।’
মিষ্টি কাজীর মেয়ে জানান, এ আর রহমান একজন বড় কম্পোজার। ওনার নিশ্চয়ই একটা রিসার্চ টিম রয়েছে। এমন না যে তিনি না জেনে বা এমন একজন লেজেন্ডকে না চিনে এমন কাজ করেছেন। যারা বলছেন ওনার কানে পৌঁছায়নি। এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা। পাশাপাশি তিনি গানের সুর সম্পূর্ণ পাল্টে আবার নতুন করে ওয়েব সিরিজে আপলোড করার অনুরোধ করেন।
উল্লেখ্য, রাজা কৃষ্ণ মেনন পরিচালিত ‘পিপ্পা’ ছবির জন্য এ আর রাহমান ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানে নতুন করে সুরারোপ করেন। কিন্তু গানটি ৭ নভেম্বর ইউটিউবে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় বাংলাদেশ ও ভারতে। তীব্র প্রতিবাদ জানান শিল্পীরা।
তাঁদের অভিযোগ, এটি রিমেক নয়, গানের পুরো সুর বিকৃত করেছেন রহমান। প্রতিবাদ জানিয়েছে বামপন্থী সংগছন ভারতীয় গণনাট্য সংঘ, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটিও। কবি আজীবন বাম মনস্ক ও সাম্যবাদী ছিলেন। তিনি পরাধীন ভারতের স্বা়ধীনতা আন্দোলন ও ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। নজরুল ছিলেন ভারতের অন্যতম কমিউনিস্ট নেতা ও সিপিআইএমের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন মুজফ্ফর আহমদের বন্ধু। ভারতে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে প্রতিবাদ এখনো অব্যাহত আছে। যদিও এ ব্যাপারে এই ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জি এন্টারটেনমেন্ট এবং এ আর রাহমানের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।