উত্তর চিলিতে শক্তিশালী কম্পন, বিদ্যুৎহীন ২৩ হাজার মানুষ

শুক্রবার উত্তর চিলির আটাকামা মরুভূমি অঞ্চলে ৬.৪ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প (Earthquake) আঘাত হানে, যার ফলে সামান্য অবকাঠামোগত ক্ষতি হয় এবং ২০,০০০-এর বেশি মানুষের বিদ্যুৎ…

6.4 Magnitude Earthquake Strikes Northern Chile; No Casualties Reported

শুক্রবার উত্তর চিলির আটাকামা মরুভূমি অঞ্চলে ৬.৪ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প (Earthquake) আঘাত হানে, যার ফলে সামান্য অবকাঠামোগত ক্ষতি হয় এবং ২০,০০০-এর বেশি মানুষের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। তবে, কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই ভূমিকম্পের ফলে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটি স্থানীয় সময় দুপুর ১:১৫ মিনিটে (জিএমটি বিকেল ৫:১৫ মিনিট) আঘাত হানে এবং এর গভীরতা ছিল ৭৬ কিলোমিটার (৪৭ মাইল)। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল আটাকামা মরুভূমির উপকূলের কাছাকাছি। এই ভূমিকম্পটি বিস্তৃত আটাকামা মরুভূমি অঞ্চলের বিভিন্ন সম্প্রদায়ে অনুভূত হয়, তবে প্রাথমিক প্রতিবেদনে কোনো তাৎক্ষণিক হতাহতের খবর নিশ্চিত হয়নি।

   

চিলির হাইড্রোগ্রাফিক অ্যান্ড ওশানোগ্রাফিক সার্ভিস জানিয়েছে, ভূমিকম্পের বৈশিষ্ট্য দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলে সুনামি সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করেনি। এই খবর স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য কিছুটা স্বস্তি এনেছে, কারণ চিলি প্রশান্ত মহাসাগরের ‘রিং অফ ফায়ার’-এ অবস্থিত এবং ভূমিকম্প ও সুনামির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

চিলির জাতীয় বিপর্যয় প্রতিক্রিয়া সংস্থা সেনাপ্রেডের উপ-পরিচালক মিগুয়েল অর্টিজ জানিয়েছেন, এই শক্তিশালী ভূমিকম্পের ফলে “সামান্য” অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে এবং বিদ্যুৎ বিঘ্নের কারণে প্রায় ২৩,০০০ মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, “কিছু সামান্য ভূমিধসের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যেগুলো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং স্থানীয় পৌরসভার সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” অর্টিজ আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়েছে, এবং বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরুদ্ধারের জন্য দ্রুত কাজ চলছে।

চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিক সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ একটি বিবৃতিতে বলেন, তার সরকার আঞ্চলিক প্রেসিডেন্টিয়াল প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং নিশ্চিত করেছেন যে “কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।” তিনি জনগণকে শান্ত থাকার এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানান।

চিলি ভূমিকম্পের জন্য একটি সুপরিচিত অঞ্চল। ২০১০ সালে দেশটির মধ্যাঞ্চলে ৮.৮ মাত্রার একটি ভূমিকম্প এবং পরবর্তী সুনামিতে শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। এই ঘটনার পর থেকে চিলি ভূমিকম্প-প্রতিরোধী অবকাঠামো নির্মাণ এবং জরুরি প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থার উন্নতিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। শুক্রবারের এই ভূমিকম্প, যদিও শক্তিশালী ছিল, তবে দেশের প্রস্তুতির কারণে ক্ষয়ক্ষতি সীমিত ছিল। তবুও, ভূমিধস এবং বিদ্যুৎ বিঘ্নের কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে।

Advertisements

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আটাকামা অঞ্চলের কিছু গ্রামে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে, এবং কিছু বাড়ির দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। তবে, কাঠামোগত ক্ষতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সামান্য। সেনাপ্রেডের একটি দল ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করছে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করছে।

এই ঘটনা চিলির জনগণের জন্য আরেকটি অনুস্মারক যে তারা একটি ভূমিকম্প-প্রবণ অঞ্চলে বাস করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুক্রবারের ভূমিকম্পটি তুলনামূলকভাবে গভীরে সংঘটিত হওয়ায় এর প্রভাব কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। তবে, ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী ভূমিকম্পের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জনগণকে জরুরি কিট প্রস্তুত রাখতে এবং নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার প্রশিক্ষণ নিতে উৎসাহিত করছে।

এদিকে, আটাকামা অঞ্চলের বাসিন্দারা তাদের দৈনন্দিন জীবনে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরুদ্ধার এবং ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো মেরামতের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। ভূমিকম্পের পরবর্তী কয়েক দিনে আফটারশকের সম্ভাবনা থাকায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

উত্তর চিলির এই ভূমিকম্প দেশটির শক্তিশালী প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে। হতাহতের খবর না থাকলেও, সামান্য ক্ষয়ক্ষতি এবং বিদ্যুৎ বিঘ্নের ঘটনা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য অসুবিধার সৃষ্টি করেছে। তবে, চিলির সরকার এবং জনগণের প্রস্তুতি এই ঘটনাকে আরও ভয়াবহ হওয়া থেকে রক্ষা করেছে।