পাকিস্তানে খ্রিস্টানদের ওপর হামলার অভিযোগে গ্রেপ্তার ২৫, ৪৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের সারগোধা জেলার মুজাহিদ কলোনিতে শনিবার উগ্র ইসলামপন্থী কর্মীদের নেতৃত্বে একটি বিক্ষুব্ধ জনতা সংখ্যালঘু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যদের উপর হামলা চালায়। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে…

arrested TMC MLAs assistant

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের সারগোধা জেলার মুজাহিদ কলোনিতে শনিবার উগ্র ইসলামপন্থী কর্মীদের নেতৃত্বে একটি বিক্ষুব্ধ জনতা সংখ্যালঘু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যদের উপর হামলা চালায়।

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে পুলিশ রবিবার ৪৫০ জনেরও বেশি লোককে ২৫ জন সংখ্যালঘু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যদের উপর সন্ত্রাসবাদ, ধর্মীয় গ্রন্থের অবমাননা এবং অন্যান্য অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

   

শনিবার উগ্র ইসলামপন্থী তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি) কর্মীদের নেতৃত্বে একটি বিক্ষুব্ধ জনতা লাহোর থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে পাঞ্জাবের সারগোধা জেলার মুজাহিদ কলোনিতে সংখ্যালঘু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যদের উপর হামলা করে এবং দুই খ্রিস্টান এবং ১০ জন পুলিশ সদস্যকে আহত করে বলে অভিযোগ । জনতা খ্রিস্টানদের বাড়িঘর ও সম্পত্তি জ্বালিয়ে দেয় এবং লুটপাট চালায় ।

থানায় দায়ের হওয়া এফআইআর সূত্রে খবর, “৪৫০ জনের জমায়েতে থেকে ৫০ জন নাজির মসিহ নামক একজন বয়স্ক ক্রিস্টানের বাসভবন এবং জুতোর কারখানা ঘেরাও করে এবং তার ধর্মীয় গ্রন্থের অবমাননা করে। এই উত্তেজিত জনতা এর পরেই জুতোর কারখানা, কয়েকটি দোকান ও কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা মসিহর ওপর আগুন ধরিয়ে দেওয়ার আগে পুলিশের একটি বড় দল আসে এবং মসিহ এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অন্যান্য ১০ জনকে উদ্ধার করে। “

মাসিহের পরিবার তাদের ধর্মীয় গ্রন্থের অবমাননার অভিযোগ অস্বীকার করেছে কিন্তু জানিয়েছে যে উত্তেজিত জনতা তাকে পিটিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল।

এফআইআরে আরও লেখা হয়েছে যে “বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশ কর্মীদের লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়লে, পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে । এতে কর্মকর্তা সহ অন্তত ১০ জন পুলিশ আহত হয়েছে। “

পুলিশের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে: “জনতার হামলায় কোনও প্রাণহানি হয়নি। তবে, বিক্ষুব্ধ জনতার পাথর নিক্ষেপে ১০ জনেরও বেশি পুলিশ কর্মকর্তা ও কর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশ তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবারগুলোকে উদ্ধার করে ভিড় থেকে বের করে আনে। পুলিশের সময়মত পদক্ষেপের জন্য সারগোধাতে একটি বড় দুর্ঘটনা আটকানো গেছে। শহরের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আহত খ্রিস্টান নাজিরকে চিকিৎসার জন্য সারগোধায় সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।”

পাঞ্জাব পুলিশ জানিয়েছে যে ধর্মীয় গ্রন্থ অবমাননার অভিযোগে নাজির দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হবে। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সারগোধা মুজাহিদ কলোনিতে ২০০০ এরও বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

ইতিমধ্যে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সম্পত্তিতে জনতার হামলার বেশ কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

নাজির মসীহের আত্মীয় ইফরান গিল মসিহ জানিয়েছেন যে তার কাকা চার বছর পর দুবাই থেকে ফিরেছিলেন। তিনি আরও বলেন, যে এলাকার কিছু লোক তার বিরুদ্ধে পবিত্র গ্রন্থ অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। যখন বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের দিকে এগিয়ে আসে খ্রিস্টান পরিবারগুলি তাদের ঘরের মধ্যে নিজেদেরকে আটকে রেখে জীবন বাঁচায়।এলাকায় উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ রয়েছে এবং খ্রিস্টানরা স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কিত বলে যোগ করেছেন তিনি।

পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশন (এইচআরসিপি) সারগোধার বর্তমান পরিস্থিতির জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গিলওয়ালা গ্রামের সংখ্যালঘু খ্রিস্টান সম্প্রদায় তাদের জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলেও জানান তারা।

গত বছর প্রাদেশিক রাজধানী থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দূরে ফয়সালাবাদ জেলার জরানওয়ালা তহসিলে খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে পবিত্র কোরান অবমাননার অভিযোগে অন্তত ২৪টি গির্জা এবং ৮০ টিরও বেশি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়।